অং সান সু চি’র নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেওয়া উচিত
ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন : মিয়ানমারের অধিকাংশ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, যারা অহিংস নীতিতে বিশ্বাস করে। এ ধরনের একটা ঘটনা তারা ঘটালো, যা তাদের ধর্মের সাথে মানানসই নয়। এটা শুধু এখন না, গত এক দশক ধরে বিভিন্ন মাত্রায় এমন নির্যাতনের ঘটনা চলছে। মিয়ানমার একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র এবং এ রাষ্ট্রটা মূলত সামরিক বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত। রোহিঙ্গাদের প্রতি যা হচ্ছে তা মানবতাবিরোধী অপরাধ। মানবতাবিরোধী অপরাধ শুধু আমরা বলছি না, এটা কফি আনানের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল, সেই কমিশনের রিপোর্টেও আছে। এ মানবতাবিরোধী অপরাধের কথা যেহেতু সেখানেও বলা হয়েছে তাহলে নেদারল্যান্ডে অবস্থিত হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাদের বিচার করা দরকার। আমি মনে করি, অং সান সু চি যে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে, তার সে নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেওয়া উচিত। অং সান সু চি একসময় গৃহবন্দি থাকার কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য না হয় কিছু করতে পারেনি। কিন্তু এখন তো তিনি ক্ষমতায়। তার এখন রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু করা উচিত ছিল।
এই একবিংশ শতাব্দিতে এসে এ রকম ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে এবং আমি মনে করি আন্তর্জাতিক বাহিনী এখানে মোতায়েন করা উচিত। রোহিঙ্গাদের প্রতি আমরা যে আচরণ করছি, সেটা আরও অত্যন্ত অমানবিক। যেখানে স্বাধীনতার সময় প্রায় এক কোটি লোক পার্শ্ববর্তী দেশে ছিল। পৃথিবীর কোনো দেশে যখন এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তাদেরকে বর্ডার থেকে ফিরিয়ে দেওয়া এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসীর হাতে ঠেলে দেওয়া এবং সেটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ও অমানবিক। বাংলাদেশের উচিত তাদেরকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখা এবং তাদেরকে আশ্রয় দেওয়া। এটা শুধু দেশ দেখে না। এটা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং মানবাধিকার সংস্থাও তাদের দেখভাল করে। অর্থাৎ বাংলাদেশ যেটা করছে সেটা অত্যন্ত অমানবিক।
অনেকেই বলছে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলে বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তা হুমকি হতে পারে। আমি মনে করি, এটা মোটেই ঠিক না। জঙ্গি হলো একটা ভিন্ন বা আলাদা ইস্যু। এটা নিরাপত্তার জন্য কোন ইস্যুই না। যদি অনিরাপত্তামূলক কোনো ঘটনা ঘটে, সে জায়গাটাকে এড্রেস করতে হবে। যাদেরকে আশ্রয় দেওয়া হবে, যদি তারা কোনো অপরাধমূলক কর্মকা-ে লিপ্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশের আইনে তাদের বিচার হবে। তাই বলে একজন বা দু’জন অপরাধ করতে পারে বলে এ রকম জনগোষ্ঠীকে বিপদের মুখে ঠেলে দিবেন না। আর বাংলাদেশের ১৬ কোটি লোক তো আমাদের নিজস্বই আছে। সেখানে ৪-৫ লাখ আসতে দিবেন না, তাহলে নিজেকে একজন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে কিভাবে দাবি করবেন? যদি কোনো কারণে বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, পার্শ্ববর্তী দেশে হাজার হাজার লোক আশ্রয় নিতে যাওয়ার সময় যদি তারা আমাদেরকে ফিরিয়ে দেয়, তখন আমাদের কেমন লাগবে? এ রকম পরিস্থিতি তো যেকোনো দেশেই উদ্ভব হতে পারে।
পরিচিতি: সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ