পাপের চিকিৎসা খাঁটি দিলে তাওবা! পর্ব-১
মুনশি মুহাম্মাদ আবু দারদা যশোরী : তওবা শব্দটি আরবি। যার অর্থ হল ফিরে আসা। কোরআন এবং হাদীসে আল্লাহর নিষেধকৃত বিষয়সমূহ ত্যাগ করা ও তার আদেশকৃত বিষয়সমূহের দিকে ফিরে আসাকে বোঝাতে ব্যবহার হয়েছে শব্দটি। যেমন কোরআনে আল্লাহর ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মোমেনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করার মত তওবা কর।’ ইছলাহ ও আত্মসংশোধনের প্রথম কাজ হল আল্লাহর কাছে তওবা করা।
ইহয়াউল উলূম কিতাবে ইমাম গায্যালী (রাহ.) লিখেছেন, কেউ যখন নিজের ইছলাহ ও সংশোধনের জন্য আগে বাড়তে চায় তখন তার প্রথম কাজ হলো পূর্ণরূপে তাওবা করা। অর্থাৎ পিছনের সমস্ত গোনাহ থকে আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া এবং ইসতিগফার করা। এজন্য মাশায়েখ ও বুযুর্গানে দ্বীনের তরীকা এটাই যে, আল্লাহ তা‘আলা যখন কাউকে নিজের ইছলাহ ও সংশোধনের ফিকির দান করেন আর সে ইছলাহের নিয়তে তাদের খেদমতে উপস্থিত হয় তখন প্রথমেই তারা তাকে তাওবার তালকীন করেন, যেন সে খাঁটি তাওবার মাধ্যমে পিছনের সমস্ত গোনাহের নাজাসাত ও গান্দেগি থেকে নিজেকে পবিত্র করে নেয়।
এভাবে তাওবার মাধ্যমে যখন সে নতুন জীবন শুরু করবে তখন তার উপর আল্লাহ তা‘আলার রহমত নাযিল হবে। এজন্যই তাওবার এত গুরুত্ব এবং তাওবাই হচ্ছে ইছলাহে নফস ও আত্মসংশোধনের প্রথম সিঁড়ি। ইজমালি ও সংক্ষিপ্ত তাওবা তাওবা দু’প্রকার। ইজমালি তাওবা ও তাফসীলি তাওবা। ইজমালি তাওবা হলো একসঙ্গে পিছনের সমস্ত গোনাহ থেকে তাওবা করা। অর্থাৎ প্রথমে দু’রাকাত ‘ছালাতে তাওবা’ পড়ে এভাবে দু’আ করবে, ‘হে আল্লাহ! জীবনে আমার যত গোনাহ হয়েছে, যত ভুল-ভ্রান্তি ও পদস্খলন ঘটেছে, সমস্ত কিছু থেকে আমি আপনার কাছে মাফ চাই।
হে আল্লাহ, আমি তাওবা করছি, ইসতিগফার করছি, এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করছি যে, বাকি জীবনে কখনো কোন গোনাহ করবো না। আপনি কবুল করুন এবং তাওফীক দান করুন, আমীন।’ এটা হলো ইজমালি তাওবা, যা ইছলাহে নফসের প্রথম কাজ। ইজমালি তাওবা এর পর হলো তাফছীলি তাওবা। অর্থাৎ প্রতিটি গোনাহ থেকে আলাদা আলাদা তাওবা করা। এই তাওবার নিয়ম এই যে, যে গোনাহ থেকে তাওবা করা হচ্ছে যদি তার ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হয় তাহলে তার ক্ষতিপূরণ করতে হবে। যেমন কারো সম্পদ আত্মসাৎ করা হয়েছে; এখন ক্ষতিপূরণ না করে বসে বসে তাওবা করছে।
তো এমন তাওবা কীভাবে কবুল হতে পারে! আগে তো পয়সা ফেরত দিতে হবে, কিংবা যার পয়সা তার কাছ থেকে মাফ নিতে হবে, তারপর তাওবা করতে হবে। তদ্রƒপ কাউকে কষ্ট দেয়া। তো মাফ চেয়ে নেয়ার মাধ্যমে এর ক্ষতিপূরণ হতে পারে। এটা না করে শুধু তাওবা করা যথেষ্ট নয়। উপরে যা বলা হলো তা হচ্ছে হুকূকুল ইবাদ বা বান্দার হক থেকে তাওবা করার বিষয়। আল্লাহর হক থেকে তাওবা করা সম্পর্কেও একই কথা। যেমন কেউ যাকাত আদায় করেনি। তো যেহেতু পিছনের যাকাত আদায় করার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব সেহেতু যাকাত আদায় না করে শুধু তাওবা করলে তা কবুল হওয়ার কথা নয়। তদ্রƒপ যদি নামায-রোযা কাযা হয়ে থাকে, আগে সেগুলোর কাযা আদায় করো, তারপর তাওবা করো। এখন তো এমন মাসআলা খুব শোনা যায় যে, উমরী কাযা বলে কোন কিছু নেই।
তাদের দলীল হচ্ছে এই হাদীসÑ ইসলামপূর্ব জীবনের সমস্ত গোনাহ ইসলাম মুছে দেয় অর্থাৎ কেউ যদি নতুন ইসলাম গ্রহণ করে, তবে ইসলাম গ্রহণ করার আগের জীবনে যত গোনাহ সে করেছে, ইসলামের কারণে সেগুলো মুছে যাবে। সুতরাং আশি বছরের বুড়ো নওমুসলিমকে পিছনের নামায আর কাযা করতে হবে না, বরং যেদিন সে ইসলাম গ্রহণ করেছে সেদিন থেকে নামায পড়তে হবে। কিন্তু কথা হলো তাওবা করা, আর ইসলাম গ্রহণ করা এক নয়। সুতরাং একথা বলা ঠিক নয় যে, সারা জীবন নামায তরক করার পর তাওবা করাই যথেষ্ট; তাওবা করার পর পিছনের নামায আর কাযা করতে হবে না, তাওবা দ্বারাই নামায মাফ হয়ে যাবে, যেমন ইসলাম গ্রহণ করার পর পিছনের নামায কাযা করতে হয় না। এটা ভুল চিন্তা। তাওবাকে ইসলাম গ্রহণের উপর কিছুতেই কিয়াস করা যাবে না। কেননা কাফির অবস্থায় তো তার প্রতি শুধু ঈমান আনার এবং ইসলাম কবুল করার দাওয়াত ছিলো। নামায বা অন্য ইবাদত তো তার উপর ফরযই ছিলো না।