বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজ মূল্যায়ন
অঘোর ম-ল
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একটা টেস্ট জেতা এবং টেস্ট সিরিজ ড্র করা, সেটা নিশ্চয় কম বড় ব্যাপার নয়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট মোটামুটি ভালো খেলছে, এটা বলতেই হবে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট সিরিজ ড্র করে আসা এবং তার আগে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করা এবং তারই ধারাবাহিকতায় অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সিরিজ ড্র। তবে ড্রতে শেষ না হয়েই এই সিরিজটা বাংলাদেশ জিততেও তো পারতো। সেই সম্ভাবনাটাও বেশি দেখা দিয়েছিল। এই উপমহাদেশে টেস্টে পিছিয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া এর আগে কখনো সিরিজ ড্র বা সিরিজ জিততে পারেনি। সেটাও কিন্তু তারা এবার করে দেখাল। এই জায়গাটাতে অস্ট্রেলিয়া বোধ হয় বোঝালো, মানসিক দিক দিয়ে তারা বাংলাদেশের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে । পেশাদারিত্বের দিক থেকেও তারা এগিয়ে। অস্ট্রেলিয়াও আবার ভুল করলো, বলতেই হবে। যে কারণেই হোক, বাংলাদেশের সঙ্গে টেস্ট ম্যাচ না খেলার খেসারত কি দিলো তারা ঢাকা টেস্টে? ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশ দাপটের সঙ্গেই জিতেছে।
এবং ভালো ভাবে জিতলো। সে জায়গাতে আরেকটি বড় কারণ বা বড় ভূমিকা রাখল ঢাকার উইকেট। এই উইকেটটা ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে ঠিক যে ধরনের মানসিকতা দাবি করেছিল, অস্টেলিয়া সেটা পারেনি দেখাতে। সেই জায়গাতেও বাংলাদেশ আরেকটু এগিয়ে থাকল। দুটি টেস্টে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে বড় ভূমিকা রেখেছে টস জেতা। টস জিতে ঢাকা টেস্টে খুবই সদ্ব্যবহার করেছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার যেভাবে ব্যাট করার কথা, সেটা তারা করতে পারেনি। হয়তো তারা পরিবেশ, পরিস্থিতি ও উইকেটের সঙ্গেও মানিয়ে নিতে পারেনি। তারপরও কোনোভাবে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই ঢাকা টেস্টে সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত পারফরমেন্সকে। কেনো তিনি বিশ্বের এক নম্বর অল রাউন্ডার, সেটা তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও প্রমাণ করলেন। সে জায়গাতে ঢাকা টেস্টে সাকিব আল হাসান ম্যান অব দ্যা ম্যাচ এটাও ঠিক। আবার একই সঙ্গে তামিম দুটো ইনিংসে যেভাবে ব্যাট করলো সেটাও প্রসংশার দাবি রাখে। তবে চট্টগ্রামে মনে হলো নিজের মাঠ, দর্শকের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এই জায়গায় কেনো ব্যর্থ হলো তামিম, তিনিই সেটা ভালো বলতে পারবেন। তামিমের ব্যাট চট্টগ্রামে চওড়া হতো এবং ইনিংস যদি বড় হতো, তাহলে সিরিজের স্কোর লাইন অন্যরকম হতে পারতো।
চট্টগ্রাম টেস্টে আরও একটি বিষয়, যারা ক্রিকেট ফলো করে তাদের সবার নজরে পড়বে। অবশেষে মমিনুলকে জায়গা দেওয়া হলো প্রথম ইনিংসে চার নম্বরে আবার দ্বিতীয় ইনিংসে তাকে ব্যাট করানো হলো নিজের জায়গা থেকে সরিয়ে আট নম্বরে। এটা আসলে কোন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সেটা বলা কঠিন। যে ব্যাটসম্যানটা বিশ্বের সব গুলো টেস্ট কান্ট্রির বিপক্ষে ভালো রান করেছিলেন, দেশের অন্যতম সেরা সফল ব্যাটসম্যানকে নিয়ে যখন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়, এতে তো খুব বেশি ভালো কিছু নিয়ে এলো না। চট্টগ্রাম টেস্ট চারদিনেই শেষ হলো, সেখানেও বলতে হবে এখানে একটা বার্তা দিলো ক্রিকেট বিশ্বে, টেস্ট ক্রিকেটটা অনেক বেশি উত্তেজক, অনেক বেশি আগ্রহী এবং টেস্ট ক্রিকেট সেই একগেয়েমী থেকে বেড়িয়ে এসেছে। টেস্ট ক্রিকেট মানে পাঁচ দিন শেষে ফলাফল ড্র তেমন কিছু না। দুই টেস্টের ফলাফল এলো এবং সেই ফলাফলটার এককভাবে কেউ কৃতিত্ব নিল না। দুই দলই সমান কৃতিত্বের ভাগিদার হয়ে থাকলো। এটা টেস্ট ক্রিকেটের একটা বড় জয়। বাংলাদেশ এগিয়েছে সেটা মানতে হবে। কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার যে গ্রাফটা সেটাকে আরও উন্নত করা দরকার। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে জিতে প্রমাণ করতে হবে যে, আমরা ভালো টিম। বলা যায়, সামনে সাউথ আফ্রিকা ট্যুরটা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে বাংলাদেশকে, বিশেষ করে এবিষয়টি ক্রিকেটাররা ভালো জানেন।
পরিচিতি: ক্রীড়া বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ