রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতা জরুরি
অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী
রোহিঙ্গা সমস্যা একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। রোহিঙ্গা একটি জাতি গোষ্ঠি, তারা মুসলিম জনগোষ্ঠি কিন্তু তারাও মানুষ। আরকান রাজ্যে যে সমস্যার কারণে তাদের ওপর নিপীড়ন হচ্ছে ও লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বা প্রবেশ করার অপেক্ষায় আছে, এটি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের দেশে যদি কোন সমস্যা হয়, তা আমাদের দেশের রিলেটেড সমস্যা, যে সমস্যায় আমরাও কাউকে ভারতে পাঠিয়ে দেইনা বা অন্য জায়গায় চলে যাওয়ার জন্য কোন বাধ্য করি না। একইভাবে আরাকান রাজ্যের মুসলমান অধিবাসীদের সমস্যার সমাধান তাদেরই করা উচিত। আমরা মনে করি, তারা যেহেতু ওই দেশেরই নাগরিক, মায়ানমার সরকারেরই তাদেরকে সুষ্ঠভাবে নাগরিকত্ব দিয়ে সমস্যা সমাধান করা উচিত। কিন্তু তারা সেটি না করে এদেরকে বাঙালি সন্ত্রাসী বলে বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য করছে। এবং মানবিক যে সমস্যা তৈরী হয়েছে, সেটি কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ সরকারেরও এখানে করণীয় আছে। আমি মনে করি, এই মানবিক বির্পযয়ে বাংলাদেশ সরকারের এবং বাংলাদেশের মানুষের তাদের পাশে দাড়ানো উচিত। প্রথমত, তাদেরকে আশ্রয় দিয়ে মানবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা দরকার। দ্বিতীয়ত, কূটনৈতিক পর্যায়ে এই বিষয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকে ওই দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা। এটি আমাদের জন্য ইতিবাচক হবে।
যদি এটি করতে আমরা ব্যর্থ হই এবং এই রোহিঙ্গাদের পাঠাতে ব্যর্থ হই তাহলে তারা শুধু কক্সবাজার, বান্দরবন অঞ্চল নয় সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। তারা নিজেরা টিকে থাকার জন্য বৈধ হোক, অবৈধ হোক বিভিন্ন পন্থায় নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবে। আমাদের দেশে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাস বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যক্রম করবে। আমাদের দেশে বিশাল জনসংখ্যা, তাদেরকেই আমরা নিয়ন্ত্রন করতে পারছি না, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারছি না। বিশাল সংখ্যক জনসংখ্যাকে আমরা কিভাবে নিয়ন্ত্রন করব? সেক্ষেত্রে স্বার্থান্বেষী মহল সেটা কোন রাজনৈতিক গোষ্ঠি হোক, আর কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠি হোক বা উগ্রবাদি গোষ্ঠি হোক তারা কিন্তু কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা করবে। এ ধরনের বিপর্যয়ের কারণে সামাজিক পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা হতেই পারে। আমরা যদি এদের ব্যবস্থাপনা করতে না পারি, সেটি বাংলাদেশে রেখে হোক অথবা কূটনৈতিকভাবে ব্যবস্থা করে তাদেরকে পাঠিয়ে দেয়ার মাধ্যমে হোক, তাহলে আমাদের দেশে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা এবং সমস্যা হতে পারে। তারা যেহেতু নারী-শিশুসহ বিশাল জনগোষ্ঠি এবং তারা খুবই নির্যাতিত এবং অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে, আমাদের উচিত তাদের পাশে দাড়ানো এবং তাদেরকে এই বির্পযয় থেকে প্রাথমিকভাবে উত্তরণে সহায়তা করা। তাদেরকে আন্তর্জাতিকভাবে কূটনীতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবশ্যই সে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা উচিত। আমরা এটা না পারলে আমাদের দেশে সামাজিক অস্থিরতা ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরী হতে পারে।
কূটনৈতিকভাবে আমাদের সফল হওয়ার কোন বিকল্প নাই। এখানে আসলে মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এগুলো বিষয় না, বিষয়টা হলো মানবিকতার, মানবিক বিপর্যয়ের। কূটনৈতিকভাবে অবশ্যই বোঝাতে হবে যে, এরা বাংলাদেশের নাগরিক নয়, এরা মায়ানমারের নাগরিক, এরা আরাকান রাজ্যের নাগরিক, এদের সে দেশে থাকার অধিকার আছে।
লেখক: অধ্যাপক, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ