ঝুলে আছে সরকারি কর্মচারী আইন
ইয়াছির আরাফাত : মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদনের পর দুই বছর পার হলেও সরকারি কর্মচারী আইনের খসড়া এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এ আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে কমিটি কাজ করছে জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বলছেন, সরকারের এ মেয়াদেই আইনটি পাস করার চেষ্টা করবেন তারা। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি কর্মচারী আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে আপাতত তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে কবে নাগাদ খসড়াটি চূড়ান্ত হতে পারে সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি তারা।
সরকারি দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র হওয়ার আগে কোনো সরকারি কর্মচারীকে গ্রেফতারে অনুমতি নেওয়ার বিধান রেখে ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই সরকারি কর্মচারী আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
এরপর গত বছরের ২৪ নভেম্বর ওই আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় তোলা হলেও তাতে অনুমোদন না দিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উপস্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য সংবিধানে পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়নের বাধ্যবাধকতা রাখা হলেও ৪৫ বছরেও সেই আইন হয়নি। বিধি, নীতিমালা ও দফায় দফায় নির্বাহী আদেশ জারি করে সরকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। সরকারি কর্মচারী আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে আপাতত কোনো উদ্যোগ দেখছি না। কোনো আইন না থাকায় সরকারি চাকুরেদের নিয়োগ, পদোন্নতি, জ্যেষ্ঠতা, ছুটি, পদায়ন, প্রেষণ, লিয়েন, ক্যাডার সার্ভিস, শৃঙ্খলা ও আচরণ, অবসর, পদত্যাগ, স্বেচ্ছা অবসর ও অক্ষমতাজনিত অবসর, পদোন্নতি পরীক্ষা ও কর্মমূল্যায়ন, ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও দক্ষতা উন্নয়ন, উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মতো বিষয়গুলোর ফয়সালা করা হচ্ছে বিধি, নীতিমালা ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে। গত ২২ আগস্ট সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং অ্যান্ড ট্রেনিং অণুবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক ‘সরকারি কর্মচারী আইন’ দ্রুত প্রণয়নের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেন।
ইসমাত আরা বলেন, সরকারি কর্মচারী আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে কমিটি যাচাই-বাছাই করছে। এর আগে দু’তিনটি নীতি হয়েছিল, সেগুলো যাচাই-বাছাই করে একটা খসড়া করছি। খসড়াটি চূড়ান্ত হওয়ার পর অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় তোলা হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের ইচ্ছা এই পার্লামেন্ট থাকতে থাকতে আইনটি পাস করানো। ২০১০ সালে গণকর্মচারী আইনের খসড়া করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। ওই খসড়ার ওপর সভা-সেমিনারের পাশাপাশি অংশীজনদের মতামতও নেওয়া হয়। তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ওই খসড়ার কয়েকটি বিষয়ে বিরোধিতা করলে তা বাতিল করা হয়। পরে ২০১২ সালে সরকার নতুন খসড়া তৈরি করে। কিন্তু নতুন খসড়ায় কর্মচারীদের আউটসোর্সিং করার প্রস্তাব থাকায় আবারও এর বিরোধিতা আসে কর্মকর্তাদের অংশ থেকে। ফলে আবারও বিষয়টি ঝুলে যায়। এরপর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় সরকারি কর্মচারী আইনের সর্বশেষ খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়।
মন্ত্রিসভা সরকারি কর্মচারী আইনের যে খসড়ায় প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে তাতে সরকারি চাকুরেদেরে গ্রেফতারের বিষয়ে বলা আছে, চার্জশিট হলে গ্রেফতারে কোনো সমস্যা নেই, আদালত কর্তৃক চার্জশিট গৃহীত হওয়ার আগে যদি কাউকে গ্রেফতারের প্রয়োজন হয়, তাহলে সরকারের অনুমোদন লাগবে। বিডিনিউজ