রোহিঙ্গামুক্ত রাখাইন প্রদেশ, নিরব কেন বিশ্ববিবেক
গত ২০-২৫ দিন ধরে বিশ^ বিবেকের আহ্বানে সারা না দিয়ে মিয়ানমারের তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকার ও সামরিক বাহিনী মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মংডু নগরীতে গণহত্যায় মেতে উঠেছে। সারা পৃথিবীর সমগ্র প্রচার মাধ্যমে বিষয়টি আসলেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকার এই গণহত্যাকে অস্বীকার করে যাচ্ছে। অস্বীকার করার মূল কারণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি প্রতিবাদ হচ্ছে না। মুসলিম বিশে^র অন্যতম প্রধান দেশ সৌদি আরব এখন পর্যন্ত নিরবতা পালন করে যাচ্ছে। যেটা তাদের স্বাভাবিক স্বভাব। যেহেতু সৌদি আরব প্রায় দু’বছর থেকে ইয়েমেনে বিমান হামলা চালিয়ে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে সে কারণে মুসলিম বিশে^ সংকটময় মূহুর্তে সৌদি আরব নিরবতা পালন করে। ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয়Ñ এক সময় এই রাখাইন প্রদেশটা আকিয়াব প্রদেশ নামে পরিচিত ছিল। সেখানে এই রোহিঙ্গারাই দেশটা চালাত। ৪০ দশক থেকে মিয়ানমারের শাসকরা আকিয়াব প্রদেশটা দখল করে নেয়। তার পর থেকে নামকরণ করা হয় রাখাইন প্রদেশ। উপজাতি রাখাইন সম্প্রদায় এর নামে এই নামকরণ করা হয়েছে। বার্মার যখন সামরিক শাসক নেউইন ক্ষমতায় ছিলেন তখন থেকেই রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর অত্যাচার শুরু হয়। সেনাবাহিনী থেকে রোহিঙ্গাদের বাহিষ্কার করা হয়। নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। তখন থেকে রোহিঙ্গা নাগরিকদের রাজধানী রেঙ্গুন, যা বর্তমানে ইয়াঙ্গুন নামে পরিচিত সেখানে তাদের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিশ্ববিবেকের নিরবতাকে কাজে লাগিয়ে মিয়ানমারের সামরিক সরকার ও তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকার রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজেদের দেশের নাগরিক বলে মেনে নিতে পারছেন না। তাদের বক্তব্য এরা বাঙালি, বাংলাদেশের নাগরিক। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের ছয়শত বছর থেকে বসবাস করছেন। একসময় তাদের আকিয়াব প্রদেশটা নিজেদের দেশ ছিল। সেটা মিয়ানমার সরকার দখল করে নেওয়ার পর থেকে তারা তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসাবে অবহেলিত হচ্ছে, ধর্ষিত হচ্ছে, অত্যাচারিত হচ্ছেন কিন্তু তারপরও তাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকার মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রনীতির দুর্বলতার কারণে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার যুদ্ধ পরাধের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। গত কয়েকদিন থেকে বিশ^বাসী বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেখেছেন রোহিঙ্গা মুসলমানদের টুকরো টুকরো করা হচ্ছে, তাদেরকে হাত পা কেটে গলা কেটে রাখাইন উপজাতি, মিয়ানমার পুলিশ, সেনা সদস্য ও উগ্র বৌদ্ধ সন্যাসীরা উল্লাস করছেন। যদি বিশ্ববিবেক যদি প্রথম থেকে রোহিঙ্গাদের পক্ষে অবস্থান নিতেন তাহলে মিয়ানমারের সামরিক কর্মকর্তা ও তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকার রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার করার সাহস পেত না। এছাড়া একাধিক দেশ যেমন ভারত, পাকিস্তান, চীন ও ইসরাইল মিয়ানমারকে সামরিক প্রশিক্ষণ ও সমরাস্ত্র দিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি মিয়ানমার বিমান বাহিনীতে পাকিস্তানের তৈরি ৬টি জেএফ-১৭ জঙ্গি বিমান যোগ দিয়েছে। আরও ৬টি চলতি বছরের মধ্যে মিয়ানমার লাভ করবে এছাড়া ভারত থেকে সামমেরিন বিধ্বংসী, টরপেডো মিয়ানমার ক্রয় করবে। মিয়ানমার সেনা সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ইসরাইলের কমোন্ডরা। এর ফলে বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত ইসরাইলের দৃষ্টি থাকবে। এছাড়া চীন ও রাশিয়া দীর্ঘদিন থেকে মিয়ানমারের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করছে। এখন স্বাভাবিকভাবে সবাই জানতে চায় কেন মিয়ানমার সরকার রাখাইন প্রদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের উৎক্ষাত করতে চাচ্ছে। এ রাখাইন প্রদেশে রয়েছে তেল ও গ্যাসের খনি। চীন সরকার এখানে দুইশত কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। যদি রোহিঙ্গা মুক্ত করা যায় তাহলে রাখাইন প্রদেশে চীনের সামরিক উপস্থিতি বেড়ে যাবে। উদ্দেশ্য ভারতের দিকে নজরদারি রাখা। বাংলাদেশ সরকাররের করণীয় হবে আন্তর্জাতিক সবফোরামে সমস্যাটা তুলে ধরা। মিয়ানমার সরকার চাচ্ছে বাংলাদেশ যেন মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তাহলে রাখাইন প্রদেশ থেকে সমস্ত রোহিঙ্গা মুসলমানদের তারা উৎক্ষাত করতে পারবে। বাংলাদেশ এর একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী প্রয়োজন তা না হলে আগামীতে আমাদের অপ্রস্তুত থাকার সুযোগ নিয়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের দুঃসাহস দেখাতে পারে। মনে রাখা প্রয়োজন মিয়ানমারে রাখাইন প্রদেশে শত শত ইয়াবা তৈরির কারখানা রয়েছে।
তদাররিতে রয়েছেন মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তারা। তারা চাইবেন না এই মাদক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাক। যে কারণে তারা সবসময় অরাজগতা অব্যহত রাখবেন। বাংলাদেশে যেসব রোহিঙ্গারা মানবিক আশ্রয় পেয়েছে তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তাদের উপর নতুন করে অত্যাচার হবে না এর কোন নিশ্চয়তা নেই যে কারণে আমরা বিশ^বিবেকের নিরবতা ভঙ্গ করার অনুরোধ করছি। ইতিমধ্যে খ্রিষ্টান ধর্মের প্রধান পোপ ফ্রান্সিস রোহিঙ্গা মুসলমানদের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন কিন্তু সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, আরব আমিরাত, বাহারাইন ও পাকিস্তানের মতোন মুসলিম দেশগুলো নিরবতা পালন করছে, কারণটা কি? কারণ একটাই মুনাফিকরা সবসময় এই ধরনেরই আচরণ করে থাকে যদিও তাদের পোশাক দেখলে তাদের খাটি মুসলমান মনে হবে। আমরা অসহায় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়সহ বিশ্বের সকল নির্যাতিত মানুষের প্রতি আমাদের সহানুভূতি ব্যক্ত করছি।
লেখক: কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান