আসুন, শকুন বাঁচাই
শেখ মিরাজুল ইসলাম
পশু-পাখি নিয়ে কত রকমের ভুল ধারণা আর কুসংস্কার নিয়ে আমাদের বেড়ে ওঠা। কুকুর-বিড়াল নিয়ে মিশ্র ধারণা থাকলেও শিয়াল-শূকর-হায়েনা-কাক-পেঁচা-শকুন এরা কেউ আমাদের গুড বুকে নেই। কি বিচিত্র আমাদের জানার আর জ্ঞানের পরিধি। এই আমরাই যত্রতত্র সুশীলতা দেখাই, ধর্ম নিয়ে বাহাস করি, গণতন্ত্র নিয়ে বুলি দিই ইত্যাদি আরও কত কি?
কুরবানি ঈদের দিন নীরবে পালিত হলো শকুন সচেতনতা দিবস। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম শনিবার বিশ্ব শকুন সচেতনতা দিবস পালিত হয়। শকুনের কথা বললেই গড়পরতা আমজনতার মাথায় আসে মরা লাশের খুলির উপর বসে শকুন ঠোকরাচ্ছে চিত্রটি। ব্যাস! ভিলেন বনে গেল বেচারা উপকারি পাখিটি। লাশটা যে কারণে বেওয়ারিশ হলো তার বিচার না করে শকুনের গুষ্ঠি উদ্ধার করি। এজন্য বেশি দায়ী সম্ভবত কিছু অর্ধ শিক্ষিত কবি সাহিত্যিক। উপমার ব্যবহারে তাদের কোনো বাস্তব জ্ঞান নেই। বর্জ্য খাচ্ছে বিধায় সে অস্পৃশ্য! অথচ একদিন দুইদিন নয়, লক্ষ লক্ষ বছর ধরে শকুনই প্রকৃতি হতে মৃতদেহ সরানোর কাজ করে রোগব্যাধিমুক্ত পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অ্যানথ্রাক্স ব্যাকটেরিয়া, খুরা রোগ, গবাধি পশুর যক্ষ্মা, কলেরার জীবানু খুব সহজেই শকুন হজম করতে সক্ষম।
পৃথিবীতে ২৩ প্রজাতি শকুন রয়েছে। বাংলাদেশে শুধুমাত্র ৬ প্রজাতির শকুনের মধ্যে বাংলা শকুনটিই কোনোমতে টিকে আছে। দেশীয় প্রজাতির বাংলা শকুন ইংরেজি নাম ডযরঃব-ৎঁসঢ়বফ াঁষঃঁৎব। গবেষকদের মতে, গত দুই দশকে বাংলাদেশে ৯৯.৯ শতাংশ শকুন হারিয়ে গেছে। কি অপূরণীয় ক্ষতি হলো প্রকৃতির তা খালি চোখে দেখে বোঝা যাবে না।
গবেষকরা শকুনের বিলুপ্তির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন গবাধি পশুর জন্য ব্যবহৃত ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেনের ব্যবহার। এ দুটো ঔষধের প্রভাব মৃত গবাধি পশুর দেহেও থাকে। এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে এমন কোনো মৃতদেহ শকুনের খাদ্য তালিকায় চলে এলে শকুনের মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। তবে বাংলাদেশ সরকার ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর দেশে দুটি অভয়ারণ্য ঘোষণা করায় গত চার বছরে প্রায় ৪ শতাংশের মতো শকুনের বংশবৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
আসুন, শকুন পাখির সুরক্ষায় আরও সদয় হই। ‘শকুনরূপী মানুষ’ জাতীয় কোনো উপমা দিয়ে পাখিটিকে আর অপমানিত না করি।
লেখক: চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান