রোহিঙ্গা শব্দটি অতীত হচ্ছে মিয়ানমারে বেশিরভাগই এখন বাংলাদেশে
পরাগ মাঝি : এবারই রোহিঙ্গাদের উপর মরণ কামড় দিয়েছে মিয়ানমারের উগ্র জাতীয়তাবাদীরা। রাখাইন রাজ্যে একের পর এক রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে দিয়ে এটি নিশ্চিত করছে তারা। জানা গেছে, ২৪ আগস্টের পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনী ও রাখাইন বৌদ্ধদের জাতিগত নিধন ও গণহত্যার ফলে ঘর-বাড়ি সর্বস্ব ফেলে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে অধিকাংশ রোহিঙ্গা। যে কজন এখনো টিকে আছে তারাও প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশ ছাড়ার। মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে এমন আভাসই মিলছে।
এদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লিও শুক্রবার মিয়ানমারে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি দেন। বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি জানান, সাম্প্রতিক সহিংসতায় সেখানে ইতোমধ্যেই সহস্রাধিক রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হয়েছে। তবে, নিহতের প্রকৃত সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সর্বশেষ সহিংসতায় দুই লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ সংখ্যা শীঘ্রই তিন লাখ ছাড়িয়ে যাবে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৮ লাখে পৌঁছেছে। এছাড়া পাকিস্তান, ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইন্দোনেশিয়ায় ৪ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নিয়ে সুস্পষ্ট কোন পরিসংখ্যান না থাকায় ধারণা করা হচ্ছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রায় নাই হতে চলেছে। কারণ বিগত বছরগুলোতে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১০ লাখের কিছু বেশি বলে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে জানা গিয়েছিলো। পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা যেন আবার মিয়ানমারে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমান্তে স্থলমাইন পুঁতে রাখারও অভিযোগ মিলছে। এতে বোঝাই যাচ্ছে যে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রক্রিয়া প্রায় সমাপ্ত হয়ে এসেছে। দেশটির সামরিক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন উক্তিতেও এমন আভাস মিলছে।
বলা যায়, আর ক’দিন পরই মিয়ানমারের ভূমিতে রোহিঙ্গা শব্দটি হয়তো অতীত হতে চলেছে। তবে এই শব্দটিই এখন বাস্তব বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। কারণ ইতোমধ্যেই এদেশে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। বাড়তি এই জনসংখ্যাকে কিভাবে সামলাবে বাংলাদেশ সে ভাবনাই এখন মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।