অবশেষে দেশের জন্য শান্তির নোবেল মৌনতা ভেঙেছে!
ডা. জাকির হোসেন
আবার শুরু হয়েছে রাখাইন রাজ্যে জাতিগত রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান। বহুদিনের পুরনো ইস্যু নতুন করে সামনে চলে আসে মিয়ানমার সরকারে খামখেয়ালি হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলে। বহুদিনের সেনাশাসনে মিয়ানমারে এই সংখ্যা লঘিষ্ট জাতিগোষ্ঠী বহুবার অস্ত্রের আঘাতে পিষ্ট হয়েছে। নোবেলজয়ী গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সু চি ক্ষমতা গ্রহণের ফলে বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ বহুদিনের এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই শান্তি জাতিগত রোহিঙ্গাদের কপালে অধরাই রয়ে গেল। শান্তির নোবেলের গায়ে কলংকের কুলুপ এঁটে দিয়ে তিনি কিছুদিন অন্তর অন্তর জাতিগত রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে পাখির মতো গুলি করে মারছেন। কিছুদিন আগে শুরু হওয়া রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আক্রমণে হাজার হাজার রোহিঙ্গা জনগণ নিহত হয়েছে। লাখ লাখ সাধারণ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। বহু গ্রাম সম্পূর্ণরূপে জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। নিরীহ অবলা নারীদের ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না মিয়ানমারের বর্বর সেনাদল, ধর্ষণ শেষে তাদেরকে গোপনাঙ্গ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে হত্যা করা হচ্ছে।
বেসামরিক মানুষকে নির্বিচারে আটক করে চালানো হচ্ছে পশুর মতো আদিমতম বর্বর নির্যাতন। নির্যাতন শেষে তাদেরকে পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে। নিষ্পাপ শিশুদের সেদেশের ধর্মীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু থেকে শুরু করে সাধারণ বৌদ্ধরাও অকথ্য নির্যাতন করে হত্যা করছে। শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। এই সকল বীভৎসতার বহু প্রামাণ্য ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিশ্বের নামি-দামি মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হচ্ছে। এই অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে বাড়ি-ঘর ছেড়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়াসহ আরও দূরের দেশে শরণার্থী হিসেবে পাড়ি জমিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ছয় থেকে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজার অঞ্চলের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহণ করার ফলে সেখানে আগে থেকে একধরনের মানবিক বিপর্যয় বিরাজ করছে। এর মধ্যে এবার আবার সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের ফলে নতুন করে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর ধাক্কা সামলাতে বাংলাদেশের মতো নিম্ন আয়ের দেশকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
এই বির্পযয়ের ধাক্কা সামলাতে বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বহু দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিগণ। অনেক দেশের প্রতিনিধিগণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতিকে ফোন করে ধন্যবাদ দিয়েছেন, সাহস যুগিয়েছেন। বাংলাদেশের অতি পরিচিতজন হলেন নোবেলজয়ী ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস। বিশ্ব দরবারে তার রয়েছে বিপুল জনপ্রিয়তা। কিন্তু এই মানবিক সংকটে কখনোই তাকে ত্রাণকর্তার ভূমিকায় দেখা যায় না। সর্বকনিষ্ঠ শান্তিতে নোবেল জয়ী পাকিস্তানের মালালা পর্যন্ত এই মানবিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের অত্যন্ত পরিচিত মুখ শান্তিতে নোবেলজয়ী ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস বড় দেরি করে পাঁচ সেপ্টেম্বর ২০১৭ রোজ মঙ্গলবার রাখাইন রাজ্যের মানবিক সমস্যা নিরসন করার লক্ষ্যে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নিকট খোলা চিঠি লিখেন। জাতির এই বিপর্যয়ে অবশেষে তার মৌনতা ভেঙেছে এটাই বাঙালি জাতির বড় পাওয়া বৈকি!
লেখক: চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান