অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এবং কিছু কথা
মুসলমান হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই এক গ্রামে বসবাস করছেÑ এটি বাংলাদেশের স্বাভাকি চিত্র। কদিন আগে সিলেটের শ্রীমঙ্গলে গিয়ে জেনেছি ওই উপজেলায় হিন্দু-মুসলমান সংখ্যায় প্রায় সমান সমান। মসজিদের পাশে মন্দির। কারও ধর্ম পালনে কোনো সমস্যা হয় না। বাংলাদেশে অনেক গ্রাম আছে যেখানে কোনো হিন্দু পরিবার নেই। কিন্তু সেই গ্রামে যদি কোনো হিন্দু পরিবার বসতি পত্তন করতে চায়, তাকে বাধা দেওয়ার অধিকার গ্রামপতির নেই।
একইভাবে ঢাকা শহরের একটি বহুতল ভবন মানে একটি ছোট্ট গ্রাম। এই শহরের কোনো বহুতল ভবনের কোনো ফ্ল্যাট যদি কোনো হিন্দু পরিবার ভাড়া নিতে চায়, তাকে ভাড়া না দেওয়ার অধিকার কি বাড়িওয়ালা সংরক্ষণ করেন? এমন কোনো আইন আছে কিনা আমার ঠিক জানা নেই। ঢাকা শহরে এই সাম্প্রদায়িক ও অমানবিক চর্চা অতীতে ছিল না। সম্প্রতি এই চর্চা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
কদিন আগে আমাদের এক হিন্দু ধর্মাবলম্বী বন্ধু পুরান ঢাকার ওয়ারি এলাকার লারমিনি স্ট্রিটের ১৫/এ নম্বর বাড়ির একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়ার জন্য বাড়ির কেয়ারটেকারকে এক লাখ টাকা অগ্রিম প্রদান করেন। আজ সকালে তার স্ত্রীকে নিয়ে কথাবার্তা চূড়ান্ত করতে তিনি ওই বাড়িতে যান। বাড়ির কেয়ারটেকারকে যখন তিনি তার নামটি বললেন সঙ্গে সঙ্গে বেঁকে বসল কেয়ারটেকার। কারণ কোনো হিন্দু পরিবারকে বাড়ি ভাড়া দেওয়া বাড়িওয়ালার নিষেধ।
আমি ঠিক জানি না ঢাকা শহরের বাড়ি ভাড়ার নীতিমালার ক্ষেত্রে এরকম কোনো নীতিমালা আছে কিনা যে, কোনো মুসলিম পরিবার কোনো হিন্দু পরিবারকে কিংবা কোনো হিন্দু পরিবার কোনো মুসলিম পরিবারকে বাড়ি ভাড়া দিতে পারবে না। থাকার তো কথা নয়। কেউ বলতে পারেন, আমার বাড়ি আমি যাকে ইচ্ছা তাকে ভাড়া দেব। কারও কিছু বলার নেই। না, আপনি এটা বলতে পারেন না। বাড়ি আপনার। তাই বলে আপনি বাড়িতে স্বরাজ প্রতিষ্ঠা করবেন তা তো হতে পারে না। বাংলাদেশ বহুজাতিক রাষ্ট্র। এই ঢাকা শহরে বহু জাতি-গোষ্ঠীর মানুষের বসবাস। আপনার একার সিদ্ধান্তে এই দেশ চলে না। যেসব বাড়িওয়ালা ঢাকা শহরে এমন সাম্প্রদায়িক চর্চা শুরু করেছেন, তাদেরকে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করা উচিত বলে মনে করি। এই ধরনের সাম্প্রদায়িক মনোভাবকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।
লেখক: কথাসাহিত্যিক
ফেসবুক থেকে