বান্দরবানে অবৈধ পাথর উত্তোলন ও পাচার
মোনা হক : বান্দরবানের আলীকদম ও লামা উপজেলায় পাথর আহরণের যে কোনো অনুমতি নেই স্বয়ং জেলা প্রশাসকই তা নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু অনুমতির তোয়াক্কা না করেই উপজেলা দুটিতে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পাচার অব্যাহত রয়েছে। যথেচ্ছভাবে পাহাড় কেটে এবং ঝিরি ও ঝরনা খুঁড়ে লক্ষ লক্ষ ঘনফুট পাথর পাচার হচ্ছে।
জানা যায়, আলীকদম উপজেলার মাতামুহুরী রিজার্ভের তুলাতলী, বুজি ও ধুমচি খাল, চৈক্ষ্যং-এর বাঘের ঝিরি, আলীকদম থানচি সড়কের আশেপাশের ঝিরি এবং পাহাড় ও ঝরনা হইতে অবৈধভাবে উত্তোলিত বিপুল পরিমাণ পাথর পাচারের জন্য স্তূপ করিয়া রাখা হয়েছে। লামাসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলাসমূহের চিত্রও ভিন্ন নহে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, সবই হচ্ছে প্রকাশ্যে। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব সেই প্রশ্ন উঠতে পারে। অভিযোগ হল, এর পিছনে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট আছে। আছে প্রশাসনিক ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক মহলের একাংশের সমর্থন। এটা সহজেই বোধগম্য যে, এই ধরনের ক্ষমতাবানদের সমর্থন না থাকলে পরিবেশ ও সড়ক অবকাঠামোর অপূরণীয় ক্ষতি করে এই অবৈধ বাণিজ্য চলতে পারত না কোনোক্রমেই। অবৈধ পাথর পরিবহনের কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক, ব্রিজ ও কালভার্ট নষ্ট হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
শুধু তাই নয়, যত্রতত্র অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলনের কারণে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়ছে এ অঞ্চলের পার্বত্য পরিবেশের উপর। মাটি আলগা হয়ে পাহাড় ধস ও ভূমি ধস বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। শুকিয়ে যাচ্ছে পানির প্রাকৃতিক উৎস পাহাড়ি ছড়া, ঝিরি ও ঝরনাসমূহ। অবশ্য প্রশাসন যে কিছুই করছে না তা নয়। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মাঝে মধ্যে উত্তোলিত পাথর ঠিকই জব্দ করা হচ্ছে। আবার সেই পাথর তোলা হচ্ছে নিলামে। অভিযোগ আছে, অবৈধ পাচারকারীরাই জব্দকৃত পাথর নিলামে ক্রয় করে নেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অবৈধ পাথর উত্তোলন ও পাচারকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলার মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে প্রকারান্তরে তাদের এক প্রকার বৈধতাই প্রদান করা হচ্ছে।
তাই, অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পাচারের সহিত জড়িত চক্রটি যত শক্তিশালীই হউক না কেন অনতিবিলম্বে তাহাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে।