রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন পাঠ্যবইয়ে উদাহরণ হয়ে থাকবে : জাতিসংঘ
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনকে জাতিগত নিধনের সমান মনে করছে জাতিসংঘ। এই ব্যাপাওে জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অধিবেশনে রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধন নিয়ে সংস্থাটির প্রধান সোমবার কথা বলেন। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রধান জেইদ রাদ আল হুসেইন রাখাইনে নৃশংস সামরিক অভিযান গুটিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ও বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের লক্ষ্য করে দেশটির সেনাবাহিনী যে অভিযান পরিচালনা করছে, তা মনে হয় পাঠ্যবইয়ে জাতিগত নিধনের উদাহরণ হয়ে থাকবে।
তিনি বলেছেন, আমি দেশটির সরকারকে চলমান নিষ্ঠুর সামরিক অভিযান শেষ করতে ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় দায় নিতে এবং রোহিঙ্গা জনগণের বিরুদ্ধে গুরুতর ও ব্যাপক বৈষম্য রোধে নিষ্ঠুর সামরিক অভিযান শেষ করার আহ্বান জানাই।
জাতিসংঘের হিসাবে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারা এখানে বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন প্রধান আরও বলেছেন, আমরা বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং স্যাটেলাইট থেকে ছবি সংগ্রহ করেছি। সেখানে দেখা গেছে, স্থানীয় মিলিশিয়ারা রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে অগ্নিসংযোগ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ও পলায়নরত বেসামরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে।
যদিও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দাবি, তারা রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জবাব দিচ্ছে এবং বেসামরিক মানুষ এই অভিযানের লক্ষ্য নয়।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ও পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছে, ২৫ আগস্টের হামলার পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী নিষ্ঠুর অভিযান শুরু করে। সেখানে গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়। রাখাইন ছাড়া করার জন্য বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি করছে।
বিবিসি তাদের রিপোর্টে বলেছে, রোহিঙ্গা নিধনের প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের প্রধান বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর যেভাবে পদ্ধতিগত-ভাবে হামলা চালানো হচ্ছে, সেটি ‘জাতিগত-ভাবে নির্মূল’ করার শামিল। জেইদ রাদ আল-হুসেইন আরও বলেছেন, রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে যেভাবে সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে , সেটি মনে হচ্ছে পাঠ্য বইয়ের জন্য ‘জাতিগত নিধনের’ উদাহরণ হয়ে থাকবে। তিনি অবিলম্বে মিয়ানমার সরকারকে সামরিক অভিযান বন্ধের আহবান জানান।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের তদন্তকারীদের রাখাইন রাজ্যে ঢুকতে না দেয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি পুরোপুরি নির্ণয় করা যাচ্ছে না।
এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন যে মিয়ানমারের সরকার সে দেশের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন অভিযান চালাচ্ছে।
তখন কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআর অফিসের প্রধান কর্মকর্তা জন ম্যাককিসিক বলছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা পুরুষদের হত্যা করছে, শিশুদের জবাই করছে, নারীদের ধর্ষণ করছে, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং লুঠতরাজ চালাচ্ছে।