রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিন, মানবিক দিক বিবেচনায় আমরা আশ্রয় দিয়েছি : মিয়ানমারকে প্রধানমন্ত্রী
এম. আমান উল্লাহ, কক্সবাজার : মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার ও নির্যাতনে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সে দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, স্বজন হারানোর বেদনা কত নির্মম আমি বুঝি, সর্বস্ব হারিয়ে আপনারা যারা এখানে এসেছেন তারা সাময়িক আশ্রয় পাবেন। তাদেরকে মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তবে আপনারা যাতে নিজ দেশে ফেরত যেতে পারেন সে ব্যাপারে মিয়ানমারকে বলব। গতকাল ১২টায় কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে নিবন্ধিত
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে জনসভায় তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা আমাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে গণহারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল সে সময় আমরা সব কিছু ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ঠিক একই কায়দায় মিয়ানমার সরকার রাখাইন রাজ্যে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ওপর দমন, নিপীড়ন শুরু করেছে। সেখানে তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। আমরা তাদেরকে সাময়িক সময়ের জন্য আশ্রয় দিয়েছি। আমরা মিয়ানমার সরকারকে অনুরোধ করছি, দমন ও নিপীড়ন বন্ধ করে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হোক। এ বিষয়ে আমরা কমিটিও করে দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের খাদ্য, চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আমি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি। তবে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমাদের যা করার দরকার আমরা সেটি করবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে যেভাবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে তাতে কি তাদের বিবেককে নাড়া দেয় না? একজনের ভুলে এভাবে লাখ লাখ মানুষ ঘরহারা হচ্ছে। আমরা শান্তি চাই। তিনি আরও বলেন, আমরা ১৬ কোটি মানুষের দেশ। সবার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছি। সেখানে আরও ২/৫/৭ লাখ মানুষকেও খেতে দিতে পারবো। এ সময় তিনি স্থানীয়দের উদ্দেশে বলেন, এখন যারা যুবক তারা হয়তো মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি। কিন্তু আমরা দেখেছি। তাই রোহিঙ্গাদের যেন কোনো কষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তিনি প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, আমি জেনেছি যারা আশ্রয় নিতে এসেছেন তাদের অনেকেই অসুস্থ। তাদের দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা দেওয়া হোক। এ সময় রোহিঙ্গাদের যেন কোনো কষ্ট না হয় এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন ভালো থাকে সেজন্য প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন কোনো ধরনের বাণিজ্য করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।
এর আগে বেলা সোয়া ১০টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে তিনি কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখান থেকে গাড়ি বহরে কুতুপালংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি ক্যাম্পে পৌঁছান । সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি