সংকট মোকাবিলায় আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারে সরকার
আমাদের প্রতিবেশী দুটি বড় দেশ হলো চীন এবং ভারত। এমনকি দুটি দেশই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী। এই অঞ্চলে যখন কোনো সহিংসতা বা অন্য কোনো মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে, তখন এই দুটি দেশের একটা ভূমিকা থাকে। ঠিক একইভাবে আজকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, এই সংকট মোকাবিলা বা সমাধান করার জন্য তাদের রয়েছে কার্যকর ভূমিকা কিন্তু এই দেশগুলো যদি অন্য কোনো পক্ষ অবলম্বন করে তাহলে তাদের এই ভূমিকা তো নিঃসন্দেহে এই পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলবে। এবং যেটার মাশুল দিতে হবে বাংলাদেশকে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন, তারা যদি আরও কৌশলী হয় এবং অতীতের অভিজ্ঞতাগুলো যদি কাজে লাগায়, তাহলে ১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে এগ্রিমেন্টের উপর ভিত্তি করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠিয়েছিল এবং ১৯৯২ সালে বেগম খালেদা জিয়া যেভাবে রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগকেই মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতা প্রয়োজনে কাজে লাগাতে পারে। বিএনপির ওই সময়ে যারা দায়িত্বে ছিলেন, বা এখনো যারা জীবিত আছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বা অন্যান্য ক্ষেত্রে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে বাংলাদেশ আরও সমৃদ্ধ হতে পারে। আরও বেশি কৌশল অবলম্বনের জন্য অতীতের অভিজ্ঞতা দরকার, যা দেশের জন্য আরও ভালো হবে। এটা দেশের স্বার্থের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
আর দ্বিতীয়ত এই সরকার আসলে কূটনৈতিক ব্যাপারে কোথায় কী করছে এটা খুব পরিষ্কার নয়। বিএনপির আমলে এগুলো পরিষ্কার ছিল, মানুষ জানত কূটনৈতিক বিষয়গুলো সম্পর্কে। এখন প্রচার মাধ্যমে মানবিক বিষয়টা এত বড় করে দেখানো হচ্ছে যা আলমেটলি এটা মানবিক মানবিক করতে এক পর্যায়ে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষই না অমানবিক জীবন যাপনে চলে যায়, এই আশঙ্কা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। সেটি এখন চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং কূটনৈতিক তৎপরতার জন্য দুটি বৃহৎ প্রতিবেশী দেশের কূটনৈতিক যে অবস্থান, তাতে বাংলাদেশ চাপের মুখে পড়লে বাংলাদেশকে অবশ্যই সম্পূর্ণ ভিন্ন কৌশলে এগোতে হবে। আগের পুরোনো নীতি বা কৌশল বাদ দিয়ে ভিন্ন বা নতুন কৌশল এবং সেখান থেকে ১৯৭৮ এবং ১৯৯২ এ বিএনপির এই দুই শাসনামলের উদাহরণ নিতে পারে এবং এই অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশের কাজে আসতে পারে।
আবার মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকটকে নিয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠক হওয়ার কথা আছে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে চীন যদি ভেটো প্রয়োগ করে কিংবা ভারত যদি এটার বিরোধীতা করে, সেটা আমাদের জন্য খুব দুঃখজনক হবে এবং আমাদের উপর একধরনের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার মতো কাজ হবে। যেখানে মনে করতে হবে পরীক্ষিত বন্ধুরা আসলে পরীক্ষিত বন্ধু নয়। তারা লাভের আশায় সব করে বা লাভটাকে গুরুত্ব দেয় বেশি। অন্যদিকে ভারতের অবস্থানও এখনও খুব পরিষ্কার নয়। তারা এখনো রোহিঙ্গাদের নিয়ে দুলাচলে দুলছে। বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়াবে কিনা এটা নিয়েও রয়েছে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। সুতরাং এক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকাটা আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে। এবং আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, তারা কোন পর্যায়ে অবস্থান নেয়। তাদের একটা পরিষ্কার জায়গায় আসতে হবে। এভাবে চলতে পারে না। হয় তারা চীনের মতো বলবে যে, আমরা মিয়ানমারের পক্ষে অথবা বলবে বাংলাদেশেল উপর থেকে যন্ত্রণা সরিয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে সহায়তা করবে। ভারতকে দুটোর যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে।
পরিচিতি: যুগ্ম-মহাসচিব, বিএনপি
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা: আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ