মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি করতে হবে
খুশী কবির
মিয়ানমার সেনাবাহিনী বা সরকার রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে এটা জাতিগত নির্মূলের পর্যায়ে পড়ছে। কেননা, মিয়ানমার সরকার শুধুমাত্র রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপরেই অত্যাচারটা চালাচ্ছে, দেশ থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে, নির্মমভাবে গণহত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। মিয়ানমার যাই বলুক, এটা রোহিঙ্গাদের দেশ। আরাকানের ইতিহাস যদি দেখা হয়, বহু বছর আগে থেকেই, মধ্যযুগ থেকেই কোনো কোনো মুসলমান রাজারা সেখানে তাদের বসবাস করতে দিয়েছিল। এখন মিয়ানমার সরকার হঠাৎ করেই বলছে, এরা মিয়ানমারের নাগরিক নয়, এরা বাংলাদেশ থেকে এসেছে। এটা সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। এরা সম্পূর্ণভাবেই মিয়ানমারের নাগরিক। এখন শুধুমাত্র জাতিসংঘ এই ব্যাপারে কথা বললে তেমন কোনো চাপ সৃষ্টি হবে না। এটা পুরো পৃথিবীর উপরেই নির্ভর করছে। অর্থনৈতিক লেনদেন সব কিছুই এখানে বিবেচিত। জাতিসংঘ বললে একটা চাপ আছে কিন্তু তার চেয়ে বেশি চাপ সৃষ্টি করা যাবে যদি আসিয়ান এবং অন্যান্য যে সকল দেশের সাথে বাণিজ্যিক লেনদেন, সেগুলোতে বাধা সৃষ্টি করা যায়। আমার মনে হয় না শুধুমাত্র জাতিসংঘের এই মন্তব্যে কোনো ধরনের চাপ সৃষ্টি হবে। এর আগেও একইভাবে রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। সারাবিশ্বে তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি, তবে এবার ব্যাপারটা এতটাই নির্মমভাবে, ভয়াবহভাবে করা হয়েছে, যার ফলে একটা গণহত্যার সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, এটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। জাতিসংঘের বক্তব্যটা একটা চাপ সৃষ্টি করবে, যেটা হবে একটা মডার্ণ চাপ, যেটা নৈতিকতার চাপ সৃষ্টি করবে প্রত্যেক দেশের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে। কিন্তু আমরা দেখছি যে নরেন্দ্র মোদী সরকার এবং চীন এগুলো কোনো আমলেই নিচ্ছে না, এ বিষয়ে কোনো কথাই বলছে না। এই সকল দেশ থেকে চাপগুলো আসা উচিত এবং এই ইস্যুটা সিকিউরিটি কাউন্সিলেও উঠানো উচিত। কারণ, এটা সিকিউরিটি কাউন্সিলে উঠার মতো একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া যারা বাণিজ্যিক লেনদেনের সাথে জড়িত, সেই সমস্ত দেশগুলো অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে পারে, যা ইতিপূর্বে অনেক দেশ করেছে। কাতারের সাথে করেছে, লিবিয়া, ইরাক, ইরান করেছে। এইভাবে একটা অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা যেতে পারে। আন্তর্জাতিকভাবে অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা না গেলে শুধুমাত্র জাতিসংঘের চাপের উপর মিয়ানমার এই গণহত্যা থেকে সরে আসবে না।
পরিচিতি: মানবাধিকার কর্মী
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি
সম্পাদনা: আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ