যারা মুহাজিরদের সাহায্য সহযোগিতা করে তারাই সফলকাম!
মুহাম্মাদ আবু আখতার
সাহাবায়ে কিরাম (রা) আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের জীবনাদর্শ অনুসরণ করা আমাদের কর্তব্য। কেননা তারা আল্লাহর হুকুম ও রাসুলুল্লাহ (সা) এর সুন্নাত পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করেছিলেন। যারা সাহাবীদের অনুসরণ করেন আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন এবং তাদের জন্য চিরসুখময় জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘অগ্রগামী মুহাজিরগণ ও আনছারগণ এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন এমন জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্র¯্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান কৃতকার্যতা।’ (সুরা তাওবা : ১??)
আর যারা সাহাবায়ে কিরামদের আদর্শ অনুসরণ না করে নফসের কামনা-বাসনা অনুযায়ী চলে তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তির ভয় দেখিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রাসুলের বিরুদ্ধাচারণ করে এবং মু’মিনদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান।’ (সুরা নিসা : ১১৫)
আয়াতে উল্লেখিত মু’মিনদের অনুসৃত পথ বলতে কয়েকজন তাফসীরকারের মতে, সাহাবাদের অনুসৃত পথকে বোঝানো হয়েছে। আয়াতের মর্ম হচ্ছে, সত্য দ্বীন ইসলামের সত্যতা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার পরও যারা রাসুলুল্লাহ (সা) এবং সাহাবায়ে কিরামের (রা) অনুসরণ না করে বরং তাদের বিরুদ্ধাচারণ করে তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাসস্থল জাহান্নাম। মায়ানমারের বৌদ্ধদের দ্বারা নির্যাতিত অসহায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের সাহায্যের ব্যাপারে আমাদের সাহাবায়ে কিরামদের আদর্শ অনুসরণ করা উচিত। এতে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন ও রোহিঙ্গা সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান সম্ভব।
মক্কার মুসলমানগণ যখন কাফির-মুশরিকদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মদীনায় হিজরত করেন তখন মদীনার মুসলমানগণ তাদেরকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন। মক্কার মুহাজিরদের প্রতি মদীনার আনসারদের বিন্দুমাত্র হিংসা-বিদ্বেষ ছিল না, বরং হৃদয় দিয়ে তারা পরস্পরকে ভালোবাসতেন।
তারা নিজের প্রয়োজনের চেয়ে মক্কার নির্যাতিত অসহায় মুসলমানদের প্রয়োজনকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করতেন। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে মদীনায় বসবাস করেছিল এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে, মুহাজিরদের যা দেয়া হয়েছে, তজ্জন্যে তারা অন্তরে ঈর্ষাপোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে অগ্রাধিকার দান করে। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম।’ (সুরা হাশর : ৯)
মদীনার আনসার মুসলমানগণ মুহাজির সাহাবীদের আশ্রয় দিয়েই ক্ষান্ত হননি। বরং তাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন এবং জালিম কাফির বেঈমানদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছিলেন।
এমনকি শেষপর্যন্ত যে মক্কা থেকে মুসলমানদের বের করে দেয়া হয়েছিল তা তারা জয় করেন। মুসলমানদের সৈন্যসংখ্যা ও অস্ত্র কাফিরদের চেয়ে অনেক কম হওয়া সত্ত্বেও প্রায় প্রতিটি যুদ্ধে মুসলমানগণ বিজয় লাভ করেন। কারণ তাদের মজবুত ঈমানী শক্তি ছিল।
ঈমানী শক্তির বলে মুসলমানগণ তাদের কয়েকগুণ বেশি শত্রুবাহিনীর উপর জয়লাভ করতে পারে। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন ‘হে নবী, আপনি মুসলমানগণকে উৎসাহিত করুন জিহাদের জন্য। তোমাদের মধ্যে যদি বিশ জন ঈমানদার দৃঢ়পদ ব্যক্তি থাকে, তবে জয়ী হবে দু’শর মোকাবেলায়। আর যদি তোমাদের মধ্যে থাকে একশ লোক, তবে জয়ী হবে হাজার কাফেরের উপর থেকে তার কারণ ওরা জ্ঞানহীন।’ (সুরা আনফাল : ৬৫)
মদীনার আনসার সাহাবীদের মতই রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দান এবং সার্বিকভাবে সাহায্য সহযোগিতা করা আমাদের কর্তব্য। এর পাশাপাশি জালিম বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে বা সন্ধি করে যেভাবেই হোক রোহিঙ্গা মুসলমানদের আবাসভুমি তাদের জন্য নিরাপদ করা জরুরী। এভাবে সাহাবীদের অনুসৃত পথেই রোহিঙ্গা মুসলমানদের সমস্যার সমাধান সম্ভব।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া