সংখ্যালঘুদের অধিকার দেখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব
ড. মোহাম্মদ হাফিজ
উদ্দিন ভূঞা
রোহিঙ্গা ইস্যুটা আঞ্চলিক। মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশি। আরাকান অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় নির্যাতন চলছে কেন? সারা বিশ্বের কমন চিত্র, যারা সংখ্যালঘু তাদেরকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে। একটি ধর্ম এখানে সংখ্যালঘু। সংখ্যা গুরু যারা তারা সংখ্যা লঘুদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ। এবং সেই রাষ্ট্রেরই প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এই ঘটনাটি ঘটে। তখন সংখ্যালঘুরা জানমালের নিরাপত্তার জন্য দেশত্যাগ করছে।
প্রতিবেশি দেশ হিসেবে সোজা চলে আসে আমাদের বাংলাদেশে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বিশেষ করে বান্দরবান-কক্সবাজারে তাদের অবস্থান। তিন লাখের অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে তারা। আসার পরেই তাদের খাদ্যের চাহিদা, থাকার চাহিদা। এক দেশের লোক এভাবে আরেক দেশে আসতে পারে না। কিন্তু কখন তারা আসলো? যখন তাদেরকে খুন করা হচ্ছে। এক পর্যায়ে আমাদের সরকারের সম্মতিতে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। জীবনের প্রয়োজনে তারা এখন কি করবে? নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য চেষ্টা করবে। তারা সমাজের সাথে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যে কোনো অঞ্চলের ভাষায় তারা কথা বলে। তাদেরকে আলাদা করাটা খুবই কঠিন। স্থানীয়রা তাদেরকে সহায়তা করে। তাদের সাথে লেনদেন করে। মুসলিম দেশগুলো সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এতদসত্ত্বেও তারা এদেশে অসামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তাদের পুশব্যাক করার চেষ্টা করা হবে। তখন দেখা যাবে তারা ফেরত যাবে না। অনেকেই কৌশলে এখানে থাকার চেষ্টা করে যাবে। কারণ নিজের দেশ তাদের কাছে এখন নিরাপদ মনে হয় না, ভীতিকর। কারণ, রাষ্ট্রই তাদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠান এবং মিয়ানমারের সরকারের চেয়ে সেনাবাহিনী বেশি প্রভাবশালী।
অনেক সংখ্যক লোক এখানে স্থানীয়দের সাথে মিশে যাবে। চাইলেই তো আর মিশে যাওয়া যাবে না। তাদের কালচার ভিন্ন। তাই দেখা যাবে সমাজে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। এর থেকে বের হবার উপায় কি? আমাদের সরকার কি করতে পারে? আমাদের সুশীল সমাজ কি করতে পারে? এক রাষ্ট্র থেকে আরেক রাষ্ট্রের সমস্যা এটা।
জাতিসংঘ এখানে ভূমিকা রাখতে পারে। মানবাধিকার কমিশন তারা ভূমিকা রাখতে পারে। জাতিসংঘের মহাসচিব বক্তব্য রেখেছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এ সমস্যা সমাধানে কি করতে হবে? বুঝতে হবে, বাংলাদেশ সরকার এই ইস্যুটা কিভাবে দেখছে? কারণ জাতিসংঘে আমরাও আছি। মিয়ানমার আছে। চীন আছে। ভারতও আছে।
এই ইস্যুতে বাংলাদেশ ভারত আর চীনকে জড়িত করতে হবে। এবং আর্ন্তজাতিক লবিতে জাতিসংঘের কাছে উত্থাপন করতে হবে, তখন জনমত তৈরি হবে। বাংলাদেশে ইদানিংকালে টকশোর মূল ইস্যু ‘রোহিঙ্গা সংকট’।
আমাদের সচেতন সমাজ কথা বলছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতেরা কথা বলছে। এরা মতামত দিচ্ছে। ক্ষুদ্র জাতিকে নিঃশেষ করে দেওয়া, এই যদি অবস্থা চলে, তাহলে কিবাবে হবে? রাষ্ট্রের সংখ্যালঘুদের অধিকার দেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।
লেখক: অধ্যাপক, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢা.বি.
সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ