ডাকসু নির্বাচন যে কারণে হচ্ছে না
সৈয়দ মনজুুরুল ইসলাম
সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ডাকসু নির্বাচনের দাবিটি বহু পুরোনো এবং বহুদিন থেকেই ডাকসু নির্বাচনের দাবি উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের প্রতিনিধি বলতে ডাকসু থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিকে বোঝায়। ডাকসু নির্বাচন বন্ধ থাকার কারণে সিনেটের নির্বাচনে এবং অন্যান্য কাজকর্মে ডাকসু প্রতিনিধিদের দীর্ঘদিন থেকেই দেখা যাচ্ছে না।
ডাকসু নির্বাচন না হলে সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মহোদয়ও এক সমাবর্তনে ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার জন্য বলেছেন। আমার কাছে ডাকসু নির্বাচন না হওয়ার পেছনে একটা বাস্তব সংকট আছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। সেটা হল যেখানে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে একে অপরকে তাড়িয়ে বেড়ায় এবং তাদের মাঝে সহযোগিতার কোনো ক্ষেত্রই নেই। বিশেষ করে নির্বাচন এলে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সংঘাত ছাড়া আর কোনো কিছু আশা করা যায় না। এর ফলে ছাত্র সংগঠনগুলোর মনে এই দর্শনটা দানা বেঁধেছে। আমরা দেখতে পাই, গায়ের জোর যার যত বেশি, সে তত বেশি মাঠ দখল করে রাখতে পারে। দেশে বিরোধী দলকে ছাড় দেওয়ার মনোবৃত্তি সরকারি পর্যায়ের যেখানে নেই, অন্যদিকে বিরোধী দলও সরকারের সঙ্গে গঠনমূলক কোনো কাজে সহায়তা করতে রাজি না।
এমনকি সেটা যদি দেশের প্রশ্নেও হয়। আমি তো সব সময় চেয়ে আসছি ডাকসু নির্বাচন হোক। তবে যেখানে এই যে একটা ঘোরতর সন্দেহের বৈরিতার পরিবেশ সেখানে ডাকসু নির্বাচন দিলে বিরাট সংঘর্ষ বা ভয়ংকর সংঘর্ষ হতে পারে। ধরা যাক এখন ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো এবং সেখানে ছাত্রদল জয় লাভ করল। তাহলে কি তাকে কাজ করতে হবে? আমার মনে হয় না। আবার এটা বিএনপি সরকারের আমলে যদি ছাত্রলীগ জয়ী হয়। তাহলেও কি একই অবস্থা সৃষ্টি হবে হবে না? তবে সংগঠন গুলোর ভেতরে যতদিন গণতান্ত্রিক চর্চার বিকাশ না হবে, যতদিন না পর্যন্ত আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক চর্চা সহজ ভাবে গ্রহণ করবে ততদিন পর্যন্ত আমি মনে করি না ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিশেষ করে ডাকসু নির্বাচন প্রতিবছর আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমি মনে করি এখন ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ একেবারই সম্ভব না। আগামী নির্বাচনের পর দেশের পরিস্থিতি কী বিরাজ করবে তার উপর নির্ভর করে যদি একটি শক্তি-সমৃদ্ধি নির্বাচন যদি করে ফেলা যায় তাহলে এটা অনেকটা নরম হয়ে যাবে। তবে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ডাকসু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নাই। এটাই হলো আমাদের বাস্তবতা। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের দাবিটি দীর্ঘদিন ধরেই অপূর্ণ আছে। আমি তাদের প্রতি অসম্ভব সহানুভূতিশীল। আমি মনে করি ছাত্র প্রতিনিধি এলে তখন সিনেটটা পরিপূর্ণ হয়।
পরিচিতি: শিক্ষাবিদ
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ