রাজনীতির ‘রাজ’ কোথায়!
একসময় রাজনীতি ছিল পরাধীনতা থেকে মুক্তি অর্জনের হাতিয়ার, জয় বাংলা স্লোগানের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, প্রতিবাদের আগুন রাজপথের চেয়ে মনের ভিতরে বেশি জ্বলত, অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত থামানো যেত না। রাজনীতি এখন কাঙ্গালদের হাতে বন্দি। ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, গরু হাটের ইজারাদার, কন্ট্রাক্টর, সাপ্লায়ারদের কাছে জিম্মি। রাজনৈতিক নেতার কাছে রাজনীতি নেই। যাও কিছু সংখ্যক রাজনৈতিক নেতা আছেন তারা আজ স্লোগানের কাছে বন্দি। নেতারা যদি কোনো অনুষ্ঠানে আসেন, দেখা যাবে তাদের অনুসরণ করার কোনো কর্মী নেই।
ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক ঘোষণা হওয়ার দীর্ঘসময় পরে আংশিক কমিটি হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো করা যায়নি। ওয়ার্ড, থানার সভাপতি, সম্পাদক ১৬ মাস হয়ে গেল, পূর্ণাঙ্গ কমিটির নাম নেই। যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ কবে হবে। মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগ হয়েছে। ২০১৮ সালে নির্বাচন দল গুছানোর কাজ সমাপ্ত হবে কবে? দল গুছানোর দায়িত্ব যারা যথাযথভাবে পালন করতে পারে এবং চায় তাদের নানা প্রশ্নে জর্জরিত করা হয়। যারা ঘরে বসে কমিটি করার উপদেশ দেয় তারা কিন্তু সব আলোচনার উর্ধ্বে থাকে। মেয়র হানিফ বলতেন, কাজ বেশি করলে ভুল বেশি হবে। না করলে ভুল হবে কো’ত্থেকে। মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিন ভাগ হওয়ার পরে আজ প্রতিটি অনুষ্ঠানে স্লোগান নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ অবাক হয়ে হাসেন উত্তর-দক্ষিনের প্রতিযোগিতায়। উত্তর আওয়ামী লীগের আওয়াজ বেশি, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব সাদেক খান কর্মসূচি পালনের দায়িত্ব, সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রাণপন চেষ্টা করেন, স্লোগানের মাধ্যমে কর্মীরা প্রমাণ রাখেন। বাকি লীগের আলোচনা করতে চাই না। তবু প্রশ্ন উঠতেই পারে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় , উত্তরের অফিস না থাকায় কিছুটা রাজনৈতিক অসুবিধা হবেই। সাদেক খান ১৯৭৭ সাল থেকে কমিশনার ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কমিটি দায়িত্ব পালন করছেন। সে অভিজ্ঞতার আলোকে ঢাকায় অতি পরিচিত ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ আজ উজ্জীবিত। ২০১৮ সালের আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠণের মাধ্যমে রাজনীতিকে জনসম্মুখে হাজির করতে হবে। স্বার্থবাজ, কন্ট্রাক্টর, ইজারাদার, চাঁদাবাজ, মাদক স¤্রাট দিয়ে আর যা কিছু হতে পারে রাজনীতি হবে না। রাজনীতির জন্য যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, বিশ্বাস করা হয়েছে তাকে দায়িত্ব পালনে ও কমিটি গঠনে সহায়তা করতে হবে। প্রশ্ন অনেক উঠতেই পারে, এতবড় রাজনৈতিক দলে প্রশ্ন ও প্রতিযোগিতা থাকবে। অনেক সিনিয়র নেতা আছেন যারা বয়সের ভারে চলতে পারেন না, তাদের ত্যাগের কথা বিবেচনা করে সম্মান দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই। সম্মেলনে কিছু নতুন আবিষ্কার করতেই হবে, দলকে উজ্জীবিত করতে প্রতিপক্ষের দলের কিছু নেতা নিতে হবে, জয় বাংলার সিল গায়ে মেরে সাইড লাইনে বসিয়ে রাখার জন্য। রাজনৈতিক কিছু কৌশল আছে, সব কি আলোচনা করা যায় না। ঢাকাকে ঢাকার মতো রাজনীতি উপহার দিতে, হানিফ এর সহযোদ্ধা সাদেক খানের উপর আস্থা রেখেছেন, রাখুন। ঢাকা হারিয়ে যাবে না। আমার বিশ্বাস, নতুন রাজনীতিবাজ দলকে উপহার দিতে পারবেন সাদেক খান, ইতিমধ্যে অনেক প্রমাণ দিয়েছেন। ঢাকার রাজনীতি ঢাকার মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। মাটির সাথে রক্তের টান থাকে, আঞ্চলিকতার বিষয় থাকে। বংশের পরিচয় ও জনবল থাকতে হয়। অনেক উদাহরণের প্রয়োজন নেই। পুরনো ঢাকার হাফেজ মুসা, রফিক শেঠ, কাল্লু শেঠ, হারুন মোল্লা, মেয়র হানিফ, সর্বশেষ আলহাজ্ব মো. সাদেক খানের উদাহরণই যথেষ্ট। ঢাকার রাজনীতি কখনো নোয়াখালী, বরিশাল, ফরিদপুর, বিক্রমপুর দিয়ে হয়নি, হবেও না, তা হলে বি. চৌধুরী জাতীয় নেতা হয়েও ঢাকায় রাজনৈতিক অবস্থান করতে পারেননি। যারা ঢাকায় নির্বাচনি বৈতরণী পার করেছেন তা দল বা প্রতীকের কারণে, নিজেদের যোগ্যতায় নয়। তাই ঢাকাকে ঢাকাইয়াদের হাতে দিন। আমরা রাজনীতির ‘রাজ’ বের করে দিব।
লেখক ঃ ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি।/ সম্পাদনা: আশিক রহমান