হেলিকপ্টার মহড়া : স্বাভাবিক ঘটনা, নাকি ষড়যন্ত্র?
মে. জে. মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.)
মিয়ানমার আমাদের আকাশ সীমার মধ্যে হেলিকপ্টার নিয়ে আসছে। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রোহিঙ্গা সংকটের একটি অংশ। যে নিধনযজ্ঞ তারা সেখানে চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় যেভাবে সোচ্চার হচ্ছে, তারা নিশ্চয়ই এই সীমান্ত এলাকায় তারা নজর রাখার চেষ্টা করছে কিভাবে মানুষ বাংলাদেশে যাচ্ছে।
জনস্রোত কোনদিকে যাচ্ছে এটাকে অবজারভেশনে রাখার জন্যই তারা হেলিকপ্টার মিশন চালু করেছে। সীমান্ত এলাকায় হেলিকপ্টার মিশন নিয়ে তারা দেখার চেষ্টা করছে। সীমান্ত এলাকার সীমান্ত কিন্তু সরল রেখায় নেই। সীমান্ত কিছুটা আঁকাবাঁকা। হেলিকপ্টার দিয়ে তারা দেখার চেষ্টা করে কি রকম মানুষ যাচ্ছে বাংলাদেশে। তারা যে অপারেশনটা চালাচ্ছে এর পরিণতিটা কি? অনেক সময় হেলিকপ্টার র্টানিং করার সময় আমাদের দিকে চলে আসে। আমাদের দেখার বিষয় দুটি। একটি হল, এটা আমরা গ্রহণ করতে পারি না। সেজন্য আমাদের প্রচেষ্টা করতে হবে। আরেকটি হলো, তারা কিন্তু সীমান্তের এপারে আক্রমণাতœক মনোভাব দেখায়নি।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন জায়গায় এমন ঘটনা ঘটে থাকে। আমরা দেখেছি। তারা যেহেতু আক্রমণাত্মক কিছু করছে না, আমরাও তাহলে কিছু করব না। না হলে আমরাও পাল্টা জবাব দিতে পারতাম। রুখে দাঁড়াতে পারতাম। সুতরাং,আমাদের যে প্রক্রিয়া চলছে এটাই সঠিক প্রক্রিয়া। তাদের জন্য বার্তা যাচ্ছে যে আমাদের এখানে আসলেই প্রচেষ্টা করা হবে। আমরা কি গুলি করে হেলিকপ্টার ফেলে দেব? গুলি করলে তো সংঘাত আরও বাড়বে। শান্তিপূর্ণভাবে প্রচেষ্টা করাই ভালো পদ্ধতি। আমরা যদি আক্রমণাত্মক হই সে দোষটা কিন্তু আমাদের ওপরেই আসবে। আগেই পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা ছিল। এখন আরও পাঁচ লাখ যুক্ত হচ্ছে।
রোহিঙ্গারা আসার ফলে বা অবাধে প্রবেশের ফলে এখানে জঙ্গি কার্যক্রমের মতো ঘটনা ঘটবে কিনা এটাকে সেভাবে বলা যাবে না। কেননা আমর আগেই বলে আসছি যে আমাদের এখানে আগেই চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে এবং সেখানে আবার নতুন করে চার-পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা যোগ হচ্ছে।
যারা জঙ্গিবাদ উসকে দিতে চায়, বাংলাদেশের ভেতরে যারা জঙ্গি আছে অথবা যারা জঙ্গি মনোভাব নিয়ে রাজনীতি করে এবং উগ্রবাদী ধর্মীয় রাজনীতি করে তারা চেষ্টা করতে পারে রোহিঙ্গাদের বিপদে নেওয়ার। যারা তরুণ তাদের উৎসাহিত করতে পারে বিপথে যাওয়ার। জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত করার, দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করতে পারে। বাইরের জঙ্গি সংগঠনগুলো অথবা দেশের ভিতরে যেসব জঙ্গি সংগঠন রয়েছে তারা চেষ্টা করবে রোহিঙ্গাদের উসকে দেওয়ার, জঙ্গি বিস্তারের। যদি এমন কিছু সতিই হয় তাহলে বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। এতে যেমন মিয়ানমারের জন্য ক্ষতি, এবং ভারত-বাংলাদেশের জন্যও ক্ষতি হবে। সুতরাং এখানে যদি এই শরণার্থীদের নিয়ে কোনো জঙ্গিবাদের সৃষ্টি হয় তাহলে আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করবে।
পরিচিতি: নিরাপত্তা বিশ্লেষক
অনুলিখন: সানিম আহমেদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান