অবকাঠামো উন্নয়নে সবচেয়ে অবহেলিত প্রাথমিক শিক্ষা
ডেস্ক রিপোর্ট : দেশে শিক্ষা ব্যয়ের প্রায় ৯০ শতাংশই বেতন-ভাতা বাবদ। সে তুলনায় মূলধনি বা অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যয় সামান্যই। প্রয়োজন বেশি থাকলেও প্রাথমিক শিক্ষায় অবকাঠামো ব্যয়ের অংশ আবার আরো কম। বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্যমতে, প্রাথমিক শিক্ষায় ব্যয়িত অর্থের ৪ শতাংশও যাচ্ছে না অবকাঠামো উন্নয়নে। বনিক বার্তা
যদিও সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে প্রাথমিক শিক্ষার অবকাঠামো। দেশের অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়েরই ভবন থাকলেও ছাদ নেই। ছাদ থাকলেও তা ভাঙাচোরা। ফলে ঝুঁকি নিয়েই পাঠদান চলছে এসব বিদ্যালয়ে। অতি ঝুঁকিপূর্ণের কারণে পরিত্যক্ত হলে শিক্ষার্থীদের পাঠ নিতে হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। বরাদ্দের অপ্রতুলতায় অবকাঠামো সংকট থেকে বেরোতে পারছে না এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়।
ব্যানবেইসের তথ্য বলছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারের মোট ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অবকাঠামো খাতে ব্যয় হয় মাত্র ৫১২ কোটি টাকা। সে হিসাবে ওই অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষায় ব্যয়ের মাত্র ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ গেছে অবকাঠামো উন্নয়নে।
ভবন সংকট ছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষায় ঘাটতি আছে শিক্ষার্থীদের আসবাব, হাই ও লো বেঞ্চ এবং শিক্ষকদের জন্য চেয়ার-টেবিলেরও। পানি ও স্যানিটেশনেরও অপর্যাপ্ততা রয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, এসব সংকট নিয়েই চলছে দেশের ৫৬ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অবকাঠামো সংকটের কথা স্বীকার করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামানও। তিনি বলেন, এসব সমস্যা দূর করতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু যে পরিমাণ বরাদ্দ প্রয়োজন, কোনো অর্থবছরই তা দেয়া হয় না। বাজেটের মোট আকার বাড়ানোর ফলে টাকার অংকে এ খাতেও বরাদ্দ বাড়ছে। তবে শতাংশের হিসাবে তেমন বাড়ছে না। তার পরও যা পাওয়া যাচ্ছে, তার সর্বোচ্চ ব্যবহারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
শিক্ষায় মোট সরকারি ব্যয়েও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ব্যানবেইসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ২ দশমিক ১৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে মালদ্বীপ। দেশটি জিডিপির ৫ দশমিক ৭১ ব্যয় করেছে শিক্ষা খাতে। অন্যান্য দেশের মধ্যে ভারত জিডিপির ৩ দশমিক ৮৪, পাকিস্তান ২ দশমিক ৬৬, আফগানিস্তান ৩ দশমিক ৩৮ ও নেপাল ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ ব্যয় করেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের বরাদ্দ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। আর বাজেটে উন্নয়ন খাতের তুলনায় অনুন্নয়ন বরাদ্দ বেশি বাড়ানো হয়। অথচ অনুন্নয়ন খাতের সিংহভাগ অর্থ চলে যায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন, ভাতা কিংবা পেনশনে। সম্পাদনা : মোনা হক