ভারতে মুসলিম হত্যায় অভিযুক্ত গোরক্ষকরা খালাস
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার : ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি গোরক্ষার জন্য আন্দোলন করছে এবং গোমাংস খাওয়া বা পরিবহণের গুজব তুলে অনেক সময় মুসলমানদের পিটিয়ে মারা হচ্ছে। ভারতের রাজস্থানে এক মুসলমান দুধ ব্যবসায়ীকে গণপিটুনিতে মেরে ফেলার ঘটনায় মূল ৬ জন অভিযুক্তকে ছাড় দিয়েছে পুলিশ। পেহলু খান নামের ওই দুধ ব্যবসায়ী রাজস্থান থেকে গরু কিনে হরিয়ানায় নিজের বাড়িতে ফেরার পথেই আক্রান্ত হন গত এপ্রিল মাসে।
মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে তিনি যে ৬ জনের নাম জানিয়েছিলেন, পুলিশ জানিয়েছে যে তদন্তে তারা দেখেছে অভিযুক্তরা ঘটনাস্থলে ছিলই না। এই ৬ জনের মধ্যে ৩ জন হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।
রাজস্থানের আলোয়ার জেলার পুলিশ বলছে, গত এপ্রিল মাসে পহেলু খানকে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনায় তারা জেলা পর্যায়ে তদন্তের পরে ক্রাইম ব্রাঞ্চকে দিয়েও তদন্ত করিয়েছে। সেই তদন্তের শেষে গ্রেফতার হওয়া ৭ জনের সঙ্গেই আরও ২ জনের নাম যোগ হয়েছে। কিন্তু অন্য ৬ জন, যাদের নামেও অভিযোগ ছিল তাদের এই ঘটনায় যোগ পাওয়া যায়নি। তারা নাকি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না- এমনটাই তদন্তে উঠে এসেছে বলে পুলিশ বলছে।
আলোয়ারের পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট রাহুল প্রকাশ সংবাদ সম্মেলনে জানাচ্ছিলেন, ‘জেলা পর্যায়ের তদন্তের পরে সিআইডি ক্রাইম ব্রাঞ্চ ওই ঘটনার তদন্তভার নিয়েছিল। যে ৭ জন অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়ে আছেন, তারা ছাড়া আরও ২ জনের ওই ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু ৬ জন অভিযুক্ত ওই গণপিটুনিতে যুক্ত ছিলেন না।
স্বঘোষিত গোরক্ষকদের হাতে নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের বেশ কিছু মানুষ। পুলিশের তরফে যদিও বলা হচ্ছে যে ওই ৬ জন ঘটনাস্থলে ছিলেন না, তবে পহেলু খান হাসপাতালে তার মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতেই নির্দিষ্টভাবে এদের নাম জানিয়েছিলেন। তার পুত্র, যাকেও মারা হয়েছিল, সেও ওই অভিযুক্তদের চিহ্নিত করেছে।
মৃত ওই দুধ ব্যবসায়ী পহেলু খানের ছেলে ইরশাদ খান বলছিলেন, ‘বাবা তো দুদিন হাসপাতালে বেঁচে ছিলেন, এক ইন্সপেক্টর এসেছিলেন বয়ান রেকর্ড করতে। তাকে স্পষ্ট করে এই ৬ জনের নাম বলেছিলেন বাবা। সেটাই ছিল তার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি। তারপরেও তারা ছাড়া পেয়ে গেল। আমরা এখন সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হব। সেখানে আশা করি ন্যায়বিচার পাব।’
গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুলিশের কাছে প্রথম অভিযোগে অনেকের নামই লেখা থাকতে পারে। তার ভিত্তিতেই তদন্ত হয়। তখন এমনটা হতেই পারে যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পাওয়া গেল না। সেই রায় তো সবাইকেই মানতে হবে।’
এদিকে মূল অভিযুক্তদের ছাড় দেওয়া ঘটনায় রাজনৈতিক এবং সামাজিক আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যে আলোড়ন পড়ে গেছে। অভিযোগ উঠছে যে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণেই তাদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা, সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ