প্রসঙ্গ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতার তারতম্য
মো. হাফিজ আহম্মদ মজুমদার
জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ সবাই করেছে। এর মধ্যে কেউ কেউ শহীদ পঙ্গু এবং যুদ্ধাহত হয়েছে। আবার এদের মধ্যে হতে অনেকেই মহান রাব্বুল আলামিনের অশেষ কৃপা এবং রহমতে সুস্থ অবস্থায় ফিরে এসেছে। অতএব এদের মধ্যে একের সাথে অন্যদের সম্মানী ভাতার পরিমাণ দুইগুণ, তিনগুণ কম বেশি হবে কেন?
তবে কি যে বা যারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে এসেছে এদের মধ্যে প্রকারভেদে কিছুটা তারতম্য বা পার্থক্য হতে পারে। কিন্তু সেটা কয়েকগুণের অবশ্যই কাম্য নয়। সরকারি কর্মচারীদের বেতনের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতার তারতম্য। বর্তমানে সরকারের একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারির মাসিক বেতন সর্বসাকুল্যে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই উনার বিভিন্ন বক্তৃতায় এবং বিবৃতিতে বলে থাকেন, মুক্তিযোদ্ধারা হলেন এ দেশের সূর্য সন্তান। তাই যদি হয় তবে দেশের একজন সূর্য সন্তান কি একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারির থেকেও অধম? এজন্য যে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে আসা একজন মুক্তিযোদ্ধা মাসিক সম্মানি ভাতা মাত্র ১০ হাজার টাকা। এটা কি নৈতিক? যুক্তিসঙ্গত?
মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসব ভাতা প্রসঙ্গে : সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাকে বছরে দুইটি উৎসব ভাতা দেওয়া হবে এবং যারা প্রথম থেকে সম্মানি ভাতা পেয়ে আসছেন তাদের ২০১৬ সাল থেকে দেওয়া হবে। কিন্তু ২০১৬ সালের বকেয়া ভাতা না দিয়ে এ বছর রমজানের ঈদে ৭৫০০ টাকা দেওয়া হয়েছে। তাও আবার বেশিরভাগ এলাকায় সেই বোনাস পেয়েছে ঈদের পরে। কিন্তু কেন? যেখানে সরকারি কর্মচারিরা তাদের বেতন বোনাস ঈদের পূর্বেই পেয়ে থাকেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের সুদবিহীন গৃহঋণ প্রদান প্রসঙ্গে : সরকার মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সুদবিহীন গৃহঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। খুব ভাল উদ্যোগ নিঃসন্দেহে। কিন্তু এ ঋণ ১০ লাখ টাকা যা ১৫ বৎসরে ১৮০ কিস্তিতে সম্মানী ভাতা থেকে কেটে নেওয়া হবে। যা প্রতি মাসে ৫, ৫৫৫ টাকা করে করা হবে। বাকি থাকে ৪, ৪৪৫ টাকা। এখন প্রশ্ন হলোÑ যে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৪/৫ জন এবং তার আর কোনো আয় রোজগার নেই তার এই বাকি ৪,৪৪৫ টাকা দিয়ে ৪/৫ জন সদস্যের খাওয়া-দাওয়া, ভরণ-পোষণ কীভাবে চলবে? ১০ লাখ টাকা দিয়ে ২/৩ কক্ষের ছাদ দিয়ে থাকার একটা ব্যবস্থা করে ওই ঘরে ঘুমিয়ে বা শুয়ে থাকলেই কি তার পেট ভরবে? অতএব ব্যাপারটি সরকার/প্রধানমন্ত্রী মহোদয়কে ভেবে দেখতে হবে। বর্তমানে উচ্চহারের বাজার মূল্যে ২/৩ কক্ষ বিশিষ্ট একখানা ছাদ দিয়ে ঘর করতে গেলে ১৫/২০ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। অতএব আমাদের এই ঋণ হিসাবে না দেখে অনুদান হিসেবে ঘোষণা দিতে সমস্যা কোথায়?
বর্তমান ঘটনা প্রবাহের আলোকে আমার কেন যেন মনে হচ্ছেÑ গাধার নাকের ডগায় মুলো ঝুলিয়ে গাধাকে যেমন ইচ্ছা নাচানোর মতো। কারণ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়, অর্থমন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের এমনতরো গড়িমসির কারণ কী? উক্ত সংস্থাগুলো কি বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অবহেলা, অবজ্ঞা অথবা কানা চোখে দেখেন? অন্যথায় ২৬ এপ্রিল ২০১৬-তে প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হওয়ার পরেও কেন এত বিলম্ব বা গড়িমসি।
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা/সম্পাদনা: আশিক রহমান