চীন-ভারতের অবস্থান এবং জঙ্গিবাদ সৃষ্টির শঙ্কা
মে. জে. মোহাম্মদ আলী
শিকদার (অব.)
বর্তমানে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভারতে মাঝে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন দেখছি। প্রথম দিকে তাদের একটা নিরব ভূমিকা ছিল। তাদের যে ভূরাজনীতির একটা স্বার্থ আছে। তাদের সেই স্বার্থকে অটুট রাখা এবং মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সম্পর্ককে অটুট রাখার জন্য প্রথমে একটা নিরব ভূমিকা পালন করে। সেটা আমাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য এবং অপ্রত্যাশিত ছিল। ভারত কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আজকে এই বিষয়টি নিয়ে তাদের ভেতরেই প্রতিবাদ হচ্ছে। রোহিঙ্গা সংকটে তাদের সক্রিয় ভূমিকা থাকা দরকার। সেই জন্য ভারত এগিয়ে আসছে এবং তারা এই সংকটকে স্বীকার করে নিয়েছে। তারা কিন্তু আগেই এই সংকটকে স্বীকার করেনি। এখন তারা বলছে, রোহিঙ্গাদের ওপর এ ধরনের সহিংসতা বন্ধ হওয়া দরকার। ভারত রোহিঙ্গা বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে এবং আমাদের দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথাও বলেছে।
ভারতের মনোভাব পরিবর্তন হলেও চীনের অবস্থানটা কিন্তু এখনো পরিবর্তন হয়নি। সেটাই হলো আমাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা। চীনের অবস্থানের পরিবর্তন না হলে রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান বা তাদের যে ফিরিয়ে নেওয়া দরকার তা হবে না। ওই জায়গায় বড় ধরনের বাঁধা হচ্ছে চীনের অবস্থান। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন যে আগে একটা প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছিল, বলা যায় এখন একটু হলেও সুর নরম করেছে।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বিশ্ব জনমত যে এখন রোহিঙ্গাদের উপর এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনী যা করেছে তার বিপক্ষে। সুতরাং চীনের অবস্থান একটু বোঝা যাচ্ছে। তারপরও বলা যায় যে চীনের অবস্থান এখনো মিয়ানমারের পক্ষে। এটা হলো আমাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়াগা শান্তি পূর্ণ সমাধানের ক্ষেত্রে।
চীনের সঙ্গে আমাদের গভীর সম্পর্ক সব দিক দিয়ে। ব্যবসা-বাণিজ্যে এবং উন্নয়নের অংশীদার। পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে বড় বড় প্রজেক্ট চীনের দ্বারা হচ্ছে। আমরা যদি কূটনৈতিক তৎপরতার কথা বলি সেটা হয়তো দৃশ্যমান না। সমস্যাটা যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় তাহলে এখানে জঙ্গিবাদের যদি উত্থান বা বিস্তার ঘটে তাহলে চীন এ থেকে রেহাই পাবে বলে মনে হয় না। চীনের জন্যও হুমকি সৃষ্টি করবে। সুতরাং রোহিঙ্গা সংকট কীভাবে শান্তিপূর্ণ সমাধান করা যায়, যা মিয়ানমারের জন্যও কোনো হুমকি সৃষ্টি না করে, বা তাদের যে শঙ্কা বা আশঙ্কা, যে কারণে তারা রোহিঙ্গাদের উৎখাত করছে সেটা যেন প্রশমিত হয়। এবং সেটা কীভাবে প্রশমিত হবে তার জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমারসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে নিয়ে একটা পথ খুঁজে বের করতে হবে। আর তা না হলে সমস্যার সমাধান হবে না। আর এ বিষয়ে বাংলাদেশের উচিত চীনকে বোঝানো যে, এ সমস্যা দীর্ঘদিন জিইয়ে রাখলে মিয়ানমারে শান্তি আসবে না। এবং জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটলে আপনারাও এর শিকার হবেন।
পরিচিতি: নিরাপত্তা বিশ্লেষক
অনুলিখন: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা: আশিক রহমান