চালের দাম নিয়ে নজিরবিহীন অরাজকতা
জাফর আহমদ : চালের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। গত এক সপ্তাহে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা। আর ছয় মাসের ব্যবধানে বেড়েছে শতভাগ। সরকার চালের দাম কমানোর জন্য আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার, বাকীতে চাল আমদানির সুযোগসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও বাজারে এ প্রভাব পড়েনি। বেড়েই চলেছে চালের দাম।
বাজারে সর্বশেষ প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ৫৮ থেকে ৬২ টাকা পর্যন্ত। আর প্রতি কেজি চিকন চালের দাম ৬৫ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। ছয় মাস আগে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ছিল ৩২ থেকে ধরণ ভেদে ৩৬ টাকা। অন্যদিকে মিনিকেট ও নাজিরশাইল ব্র্যান্ডের চিকন চালের প্রতি কেজির দাম ছিল ৩৮ থেকে ধরন ভেদে ৪০ টাকা। পূর্বাঞ্চলের হাওরে আগাম বন্যায় ধান ডুবে যাওয়ার অজুহাতে চালের দাম বৃদ্ধি শুরু হয়। এরপর দফায় দফায় চালের দাম বাড়ছেই।
বাবুবাজারের পাইকারি বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ৫০ কেজি ওজনের বিআর-২৯ চালের দাম ছিল ২ হাজার ৪৫০ টাকা। প্রতি কেজির দাম ৪৯ টাকা। গতকাল একই চাল বিক্রি হয়েছে ৫৩ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৪ টাকা। এক বস্তাতে বেড়েছে ২ হাজার ৬৫০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি চিনকন চালের পাইকারি দাম ছিল ৫২/৫৩ টাকা। একই চাল গতকাল বিক্রি হয়েছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। অন্যদিকে চালের প্রধান মোকাম কুষ্টিয়াতেও উভয় ধরনের চালের দাম বেড়েছে। এ বিষয়ে বাবুবাজার আড়ৎদার সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, গত চার-পাঁচ দিন ধরে বড় চালকল মালিকরা চালের সরবারহ আদেশ নিচ্ছে না। ভরসা এখন ছোট্ট চালকল মালিকরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে চালের দাম বাড়তেই থাকবে বলে মনে করছে বাবু বাজারের আৎতদারা।
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার চাল আদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়। বাকীতে চাল আমদানি করার সুযোগ দিতে ব্যাংকগুলোতে নির্দেশ দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তারপরও চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে আসেনি। বরং ক্রমাগত বড়েছে। ১৬ হাজার মিল মালিককে সরকার কর্তৃক কালো তালিকাভুক্ত করার বিষয়টি দাম বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখছে বলে মনে করছে বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা। সরকারের কাছে চাল সরবারহ না করার কারণে এ সব চালকলকে কালোতালিকা ভুক্ত করে। তারাই বিভিন্ন সময়ে কৃত্রিমভাবে চালের দাম বৃদ্ধি করে। চালের মজুদদারি ও মুল্যবৃদ্ধির অভিযোগে গত সপ্তাহে চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আ. রশিদকে জরিমানা করে। বাজারে বর্তমান চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে এ সব ব্যবসায়ীদের কারসাজিও রয়েছে বলে তারা মনে করেন।
আ. রশিদের চাল মজুদের বিষয়টি স্বীকার করেন চালকল মালিক সমিতির একজন প্রভাশালী নেতা। পাশাপাশি আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে চালের দাম কমে আসবে বলে তিনি জানান। তবে ঈদের পর আমদানি বৃদ্ধি ও সরকারের নানামুখি উদ্যোগের ফলে চালের দাম কমবে বলেও তিনি জানান।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশের চালের চাহিদা মেটায় প্রায় ১৮ হাজার চালকল। চাল ব্যবসার সাথে যুক্ত সুত্রগুলো মনে করছে মুলবৃদ্ধির জন্য সরকার মিল মালিকদের মজুুদকে দায়ী করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। প্রকৃত পক্ষে দেশের ৮/১০ জন চাল ব্যবসাী দেরে চালের বাজার নিয়ন্ত্রন করছে। এই ৮/১০ মিল মালিকের আবার সখ্যতা রয়েছে মন্ত্রনালয়ের বেশ কিছু কর্মকর্তা। এই ৮/১০ মিল মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে চালের দাম কমবে।