শেখ হাসিনাই পারবেন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যথাযথ ভূমিকা রাখতে
রবিউল আলম
দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার শেষ নেই, অনেক কষ্টে বাঙালি আজ বিশ্বের আলোচিত স্থান দখল করেছে উন্নয়নের মাধ্যমে। জাতিগত ঐক্যের মাধ্যমে শেখ হাসিনা আলোর পথ দেখিয়েছেন, বাঁচার জন্য অধিকার আদায় করতে শিখিয়েছেন, ভোটের জন্য ভালো ও খারাপ চরিত্র বেছে নিতে বলেছেন। আমরা আজ গর্বিত বাঙালি জাতি। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির জনক ছিল, যে কারণে স্বাধীন আবাস ভূমি আছে। স্বাধীনতার উপর আঘাত আসলে প্রতিরোধের প্রশিক্ষণ আছে, তবে কেন রোহিঙ্গা নিয়ে এত ভাবতে হচ্ছে আমাদেরকে? রোহিঙ্গাদের কাছে শেখ মুজিবুরের মতো ব্যক্তিত্ব না থাকার কারণে তারা জাতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না, বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে না, স্বাধীনতার জন্য প্রকৃত সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকার দিক নির্দেশনা দিতে পারে না। অসময়ে কিছু উগ্রবাদীর প্ররোচনায় আজ রোহিঙ্গা ইস্যু সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার রোহিঙ্গা বিষয়ে মানবতার প্রশ্ন তোলা হয়েছে। মানবিক কারণে বাংলাদেশের মানুষ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সু-দীর্ঘকাল চীন মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে সমর্থন দিয়ে বিশ্ব থেকে আলাদা করে রেখেছে, অং সান সুচিকে গৃহবন্দী করে রাখতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সুচিকে নিয়ে রাজনীতি করেছে নোবেলের মাধ্যমে, এই নোবেল রাজনীতি করতে চেয়েছে আমাদের দেশেও। নোবেল যে রাজনীতির জন্য তা বুঝতে ইউনূস সাহেবকে দেখলেই বোঝা যায়, সুদের টাকা দিয়েও নোবেল পাওয়া যায়। সে বিষয় আজ নয়, আমি শুধু রোহিঙ্গা নিয়ে লিখতে চাই। রোহিঙ্গা নিয়ে অনেক লেখা লিখেছি। কুরবানি নিয়ে, আগস্ট নিয়ে দেশের প্রয়োজনে দলের জন্য লিখেছি। রোহিঙ্গা নিয়ে প্রতিদিন শত শত লেখা পত্রিকায় লেখা হচ্ছে। আমার মতো লেখক আর কি লিখব, তাই ইচ্ছা করে আদালত আর রোহিঙ্গা নিয়ে কিছুদিন লেখা বন্ধ রাখতে হয়েছে। বাংলাদেশের বিপরীত মেরু তুরস্ক হুংকার দিচ্ছে, মানবিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছে, পাকিস্তান চুপ করে আছে, ভারত নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে, সৌদি প্রিন্স গোপনে ইসরাইল সফর করে। যুক্তরাষ্ট্র নিন্দা, উত্তর কোরিয়া অস্ত্রবাজি নিয়ে বিশ্ব যখন আতঙ্কিত, এশিয়ার শান্তি বিনষ্টের জন্য ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ার যুদ্ধ যখন শেষ হয়ে এসেছে, বাংলাদেশ যখন উন্নয়নে বিশ্বকে চমকিয়ে দিয়েছে তখন এত সুখ হয়তো সহ্য করতে পারছে না কোনো কোনো রাষ্ট্র, যার কারণে রোহিঙ্গা ইস্যু সৃষ্টি করা হয়েছে। আরাকান সেলভেশন আর্মির মাধ্যমে যে উস্কানি দিয়ে রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে তা কারও কাম্য নয়। বাংলাদেশেও জঙ্গি তৎপরতা আছে, তা আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দমন করতে সক্ষম। আমাদের বিচার ব্যবস্থায় একজনের অপরাধে গোষ্ঠীসহ শাস্তির আওতায় আনা হয় না। একজন দক্ষ শাসক কখনো অপরাধকে নির্মূলের পরিবর্তে অপরাধীকে নির্মূল করতে পারে না। সারা বিশ্ব যখন শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশর পাশে দাঁড়িয়েছে, সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তখন বিএনপি নেতারা সরকারের ব্যর্থতা খোঁজার চেষ্টা করছে। জুলোম নিয়ে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের পরিবর্তে নিজেদের ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা করতে তারা ব্যস্ত। মানুষকে বাঁচাতে কোনো রাজনৈতিক দল খাদ্য সাহায্য নিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে দেখলাম না। বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে এখন রোহিঙ্গা বাঁচানো যাবে না। বিচার একদিন হবেই। ইতিহাস থেকে মুক্তি পাবে না মিয়ানমার। ইতিহাসে স্থান হবে বাংলাদেশের। মানুষ মানুষের জন্য- ভূপেন হাজারিকার বিখ্যাত গানের অর্থ বুঝতে শেখ হাসিনা হতে হয়। আজ মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান জাতিগত নিধন হচ্ছে। মানুষ কি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা দলগুলো ইতোমধ্যে মাঠ গরম করার পায়তারা করছে সমাধানের পরিবর্তে। বিশ্ব বিবেক যখন জেগে উঠেছে, বাংলাদেশের কতিপয় রাজনৈতিক দল তখন রোহিঙ্গা নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে। অসহায় মানুষগুলোকে সাহায্য সহযোগিতা করার পরিবর্তে উস্কানি দিচ্ছে, হায়রে রাজনীতি তোর রূপের অভাব নাই। আমি ভাবছি শেখ হাসিনার উদারতার সুযোগ নিয়ে রোহিঙ্গা প্রতিশোধের আগুন না ছড়ায়। ইতোমধ্যে কিছু স্বার্থবাজ বিকাশে সাহায্য প্রার্থনা করছে। সজাগ থাকতে হবে আমাদের সবাইকে। অপেক্ষা করতে হবে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর মনোভাব কি বোঝার জন্য। আমরাই পারি, শেখ হাসিনাই পারবেন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যথাযথ ভূমিকা রাখতে।
লেখক: ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি/সম্পাদনা: আশিক রহমান