বিশেষ সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী মিয়ানমার সরকার হত্যাযজ্ঞ চালানোর সাহস কোথায় পায়?
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২ তম অধিবেশন থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে খুব একটা রেজাল্ট আসবে বলে মনে হয় না। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে অথবা নিন্দা জানিয়ে একটা রেজুলেশন পাস হতে পারে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন খ্যাতিমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী। তিনি বলেন, এ সমস্যার সমাধান করা বাংলাদেশের জন্য খুবই দুরূহ। এ সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের ডিপ্লোমেসিকে মাল্টি-লেটারাল, বাই-লেটারাল করতে হবে। বিশেষ করে ভারত ও চীনকে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে এবং অন্যান্য বন্ধু রাষ্ট্রের সহায়তায় বোঝাতে পারলে কিছুটা কাজ হতে পারে। বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্রের মাধ্যমে যুক্তি ও ইতিহাস উপস্থাপনপূর্বক কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে তাদের বোঝাতে হবে যে, বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে পুরো অঞ্চলটি অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। মিয়ানমারে চীন ও ভারতের অনেক বিনিয়োগ থাকলেও ফ্রেন্ডলি ওয়েতে তাদের বোঝাতে হবে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার গুরুত্ব। তিনি বর্তমান অবস্থার জন্য বাংলাদেশের কূটনৈতিক ব্যর্থতাকে দায়ী করে বলেন, যে চীনকে আমাদের এত দরকার, সেই চীনকে তারা বুঝাতে পারেনি। তারা ভারতকে পর্যন্ত বোঝাতে পারেনি। এটা বাংলাদেশের পুরোপুরি কূটনৈতিক ব্যর্থতা। এখানে বিশ্ব রাজনীতি বুঝতে হবে, যেটা বাংলাদেশ করতে পারেনি। বাংলাদেশ করেছে আঞ্চলিক রাজনীতি, যেখানে মিয়ানমার করেছে বিশ্বরাজনীতি। সেখানেই মিয়ানমার সুযোগটা নিচ্ছে। মিয়ানমার দুটি ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন দেশ চীন ও রাশিয়াকে তাদের পক্ষে নিতে পেরেছে। তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ তখনই কার্যকর হতে পারে, যখন নিরাপত্তা পরিষদ ঐক্যমত পোষণ করে। এছাড়া জাতিসংঘের মানবিক সাহায্য, শান্তি প্রক্রিয়া, শান্তি প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি প্রোগ্রাম রয়েছে।
ভোটো ক্ষমতাসম্পন্ন রাষ্ট্রগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়া ব্যতিত কোনো রাষ্ট্রকে চাপ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জাতিসংঘ একটা দেশের সহিংসতা বন্ধ করতে পারে না। তিনি উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গাদের অং সান সু চি কোনো সুযোগ দিবে বলে মনে হয় না। এখনও মিয়ানমার ক্রমাগতভাবে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে এজন্য যে, তাদের পিছনে চীন ও রাশিয়া আছে। ভারত, চীন ও রাশিয়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনো নিন্দাও করেনি। আজকে মনে হচ্ছে আমরা বন্ধুহীন হয়ে পড়েছি। আমাদের তো কোনো বন্ধু নেই! তিনি প্রশ্ন রাখেন, আপনি কি করে একটা ইন্টারন্যাশনাল সিস্টেমে অপারেট করবেন, যেখানে আপনার কোনো বন্ধু নেই? যখন একটা দেশ নিজেদের মধ্যে ঝগড়ায় ব্যস্ত থাকে, তখন এই অবস্থা ঘটবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা যখন বলি, ঐক্যমত করেন, তখন কেউ কেউ বলেন, আপনারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে যাচ্ছেন কেন? ড. দিলারা চৌধুরী আরও বলেন, এটা সঠিক নয়। আমরা দেশের জন্য বলছি। যেকোনো মূল্যে ঐক্যমতে আসতে হবে। অন্যথায় মিয়ানমার সেই সুযোগটা নেবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আজ পর্যন্ত আমরা এখনও ঐক্যমতে পৌঁছতে পারিনি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে এখনও দেখছি ঝগড়া করতে। আমি অবস্থাটা খুব সঙ্কটাপন্ন দেখছি, যা বংলাদেশের পক্ষে সমাধান করা বড়ই কঠিন হবে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে পথে আনতে হলে চীন, রাশিয়া ও ভারতকে লাগবে। এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউকে’র পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়, তাদের এখানে কোন ইন্টারেস্টও নেই। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা আজকে এসব করার সাহস কোথা থেকে পায়? কারণ, তাদের পিছনে বড় বড় মুরব্বী আছে। আমাদের তো কোনো মুরব্বি নেই। আমরা তো ভাবছি, আমি ক্ষমতায় যাব, না তুমি ক্ষমতায় যাবে এসব বিষয়। সুতরাং আমাদের ন্যাশনাল ডিপ্লোমেটিক পলিসিকে রিফর্ম করতে হবে।
সম্পাদনা: আশিক রহমান