মিয়ানমার কি আমাদের দুর্বল ভাবছে?
ইনাম আহমেদ চৌধুরী
মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরেই রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে জাতিগত দাঙ্গা বা সহিংসতা বিরাজ করছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের সংকটের পেছনে দুটি ব্যাপার জড়িত। একটি হলো আইনগত এবং আরেকটি মানবিক। প্রথমত, ১৯৮১ সালে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এক আইনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের নাগরিকত্বের বিষয়টি অগ্রাহ্য করে। সেই সময় থেকেই মূলত রোহিঙ্গাদের উপর মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ, হত্যা এবং অমানবিক নির্যাতন চালায়। দেশটির সেনাবাহিনী কর্তৃক অত্যাচার, নির্যাতন এবং রোহিঙ্গাদের উপর গুলি করা হচ্ছে। তাদের হাত থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে এবং অনেকে সীমান্তে জড়ো হয়েছে প্রবেশের জন্য।
দ্বিতীয়ত, এই নিরাপরাধ জনগোষ্ঠী যখন বাংলাদেশে প্রবেশ করছে তখন তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। এখন তারা যে মানবেতর জীবনযাপন করছে, এটি হচ্ছে একটি মানবিক বিপর্যয়। আবার তাদের বাংলাদেশ থেকে পুশব্যাক করা বা এভাবে ফিরিয়ে দেওয়াও যায় না। অন্যদিকে এ সমস্যাটা বাংলাদেশের ঘাড়ে নেওয়াটাও খবই দুস্কর। অথচ বাংলাদেশের উচিত ছিল মিয়ানমারের উপরে একটা উপযুক্ত চাপ সৃষ্টি করা। আমার মনে হচ্ছে, আমরা সে দক্ষতাটা দেখাতে পারছি না। রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশেই বিক্ষোভ এবং মিছিল করা উচিত ছিল। প্রশ্ন হলো, মিয়ানমার আমাদের দুর্বল ভাবছে কিনা বা তা না হলে কেন তারা এ কাজগুলো করছে? এ বিষয়গুলো এখন আমাদের ভাবা উচিত। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদের ভাষা আরও জোরাল হওয়া উচিত। আর এখন খুব জরুরি ভিত্তিতে সকল পার্টির, সকল মতামতের লোকদের নিয়ে তাদের উপর একটা শর্ট চাপ সৃষ্টি করা। সকল পার্টির মতামতের লোকদের নিয়ে দেখানো উচিত যে বাঙালিরা একতাবদ্ধ এবং আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। শক্তভাবে আমাদের প্রতিবাদের ভাষাটা তাদের জানিয়ে দেওয়া উচিত। তবে সেক্ষেত্রে আমাদের মানবিক দিকটাও লক্ষ্য রাখতে হবে যেন বাংলাদেশের কোনো বদনাম না হয়।
আজকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যে মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে, তাদের এই সংকটকে দীর্ঘায়িত না করার জন্য এখানে অবশ্যই মুসলিম বিশ্বের একটা ভূমিকা থাকা উচিত। তাদের এই সহিংসতার জন্য উদ্বেগ এবং আরও বড় করে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষাটা জানানো উচিত।
পরিচিতি: ভাইস-চেয়ারম্যান, বিএনপি
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ