জাতিসংঘে শেখ হাসিনা : কী পেতে পারেন?
মাসুদা ভাট্টি
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে শেখ হাসিনা এখন অবস্থান করছেন নিউ ইয়র্কে। আজ দিনভর যে সকল আয়োজনে তিনি যোগ দিয়েছেন এর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি হয় ইন্টারন্যাশনাল ইকনোমিক ফোরামের আয়োজনে, যেখানে শেখ হাসিনা তার বহুল প্রচারিত উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন। ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা হওয়া ছাড়াও শেখ হাসিনা একাধিক বৈঠক করছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে যে বিষয়টি এবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের জন্য মূল আলোচ্য বিষয় হবে তা আর কিছুই নয়Ñ বাংলাদেশের সীমান্তে প্রায় দশ লাখের মতো রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থী, যারা মিয়ানমার থেকে মানবিক বিপর্যয়ের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। শেখ হাসিনা এ বিষয়ে আসলেই কী পেতে পারেন আন্তর্জাতিক কমিউনিটির কাছ থেকে? সেই প্রশ্ন নিয়ে এরইমধ্যে জোর আলোচনা চলছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব স্পষ্টই বলেছেন যে, মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির সামনে একটি মহা সুযোগ অপেক্ষা করছে যার মাধ্যমে তিনি রোহিঙ্গা সমস্যার সমধান করতে পারেন। আজ মিয়ানমারে জাতির উদ্দেশে সুচির যে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে সেটির প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে মহাসচিব বলেছেন যে, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সুচি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিকে তার গ্রহণ করা পদক্ষেপের কথা জানাতে পারেন। কিন্তু এর আগে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান রোহিঙ্গা দমনে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন তাতে সুচির ভাষণে যে একই বক্তব্য উঠে আসতে পারে সেকথা অনেকেই জোর দিয়ে বলছেন। রমাটকথা সুচির ওপর কেউই আর আস্থা রাখতে পারছেন না, কারণ তিনি আসলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হয়েই দেশটির ক্ষমতায় আসীন রয়েছেন, তাদের মতামতের বাইরে গেলে সুচির ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
এর মানে হচ্ছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে একমাত্র শেখ হাসিনা তথা বাংলাদেশই আন্তর্জাতিক কমিউনিটির কাছে একটা সমাধানের আবেদন জানাতে পারে। চীন, ভারত ও রাশিয়ার মতে দেশগুলোর কাছ থেকে যে সমাধান আশা করা গিয়েছিল তারা সে পথে হাঁটছে না। ফলে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা দ্বারা একটি ‘আক্রান্ত রাষ্ট্র’ হিসেবে শেখ হাসিনা এবার জাতিসংঘে কী ভূমিকা নেন এর ওপর নির্ভর করছে রোহিঙ্গা ইস্যুটির ভবিষ্যৎ সমাধান। শেখ হাসিনা এক্ষেত্রে তার পাশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পেতে পারেন কিন্তু তার এতদিনের মিত্র দেশসমূহ চীন-রাশিয়া-ভারত এ বিষয়ে তার পাশে থাকবে কি না, থাকলেও ঠিক কীভাবে থাকবে তা এখনও অনিশ্চিত। বিশেষ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবার জাতিসংঘে যাচ্ছেন না, কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোন আলোচনায় বাংলাদেশের পাশে থাকার যে ঘোষণা দিয়েছেন তাতে কেউ কেউ আশাবাদী হয়ে উঠছেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতকে পাশে পাওয়ার ব্যাপারে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে এবারের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভা যে বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ এই সভা থেকে কেবল রোহিঙ্গা ইস্যুতেই আন্তর্জাতিক কমিউনিটির একটি দিকনির্দেশনা পাবে তাই-ই নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্জনের স্বীকৃতিও মিলবে এই সভাতেই। একইসঙ্গে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশন থেকে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে অর্জনই হোক না কেন তা আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা-রাজনীতির গতি-প্রকৃতিও ঠিক করে দেবে।
ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর, সোমবার ২০১৭
ই-মেইল : সধংঁফধ.নযধঃঃর@মসধরষ.পড়স