চালের মূল্যবৃদ্ধি : রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থসংঘাত বন্ধ করতে হবে
অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম
চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কেন এমনটি হচ্ছে? কারণ অনেক। সরকার নিয়মিত খাদ্য কিনে খাদ্য গুদামে রাখার কথা, সেটা হয়নি। মিল মালিকদের মজুদ নিয়মিত মনিটরিং করার কথা আইনে আছে, এটা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো করেনি। তাদের দায়িত্বের প্রচ- অবহেলা রয়েছে এবং শিথীলতা আছে। এবং এসব ক্ষেত্রে আবার ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে যেটা আছে ১২ জন ব্যবসায়ী আছে, যারা পুরো মার্কেটটা কন্ট্রোল করে। সরকার ২৮ থেকে ৩ শতাংশে শুল্ক নামিয়ে এনেছে। এসব চাল বাইরে থেকে এসে ওইসব কোম্পানির গুদামে উঠে, তাদের বস্তায় ভরে বাজারে আসে। অর্থাৎ ওটাও তাদের মুনাফা হয়ে গেছে। ওটায় পাবলিক কোনো বেনিফিট নেই। এসব ঘটনার মধ্যে দিয়ে আজকে দাম বৃদ্ধির জায়গায় পৌঁছে গেছে।
বন্যার কারণে খাদ্য চাহিদার তুলনায় ঘাটতি ন্যাচারলি তৈরি হয়েছে। এবং এর জন্য যে ব্যাকআপ দেওয়ার কথা সরকারিভাবে সেটা ফেল করেছে। এবং আমদানিকারকদের ওপর সরকার নির্ভর করেছে। আমদানিকারকেরা ওই সুবিধা নিয়ে বাজারে আরও বেশি মুনাফা বাড়ানোর জন্য মিল মালিকদের সঙ্গে আঁতাত করেছে। এখন এসব কিছু যে যার জায়গা থেকে, যে যার মতো করে ব্যাখ্যা দেওয়ার তো সুযোগ নেই। রাজনীতিবিদেরা তো সরকার পরিচালনা করেন, আর ব্যবসায়ীরা হচ্ছে ব্যবসাদার। এখন রাজনীতিবিদরা যদি ব্যবসায়ী হয়ে যান এবং ব্যবসায়ীরা যদি রাজনীতিবিদ হন তাহলে তো সরকার আর ব্যবসায়ীর স্বার্থ এক হয়ে একাকার হয়ে গেছে।
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার খোলা বাজারে (ওএমএসে) এবার আতপ চাল দেওয়া হচ্ছে। তবে চট্টগ্রামে লোকে আতপ চাল খায়। চাল যদি সরকার কিনেই দেয়, মানুষের জন্য যেটা খাওয়া উপযোগী সেই চালই দেওয়া উচিত। সিদ্ধ চালই খায় সাধারণ মানুষ, মোটা চাল কম দামে সিদ্ধ চালই বাজারে চলে। আতপ চাল মানুষ খেতে পারে না। যে চালে মানুষের অনাগ্রহ তা কেন দিতে হলো?
এসব থেকে প্রতিয়মান হয় যে সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যক্তিরা এ বিষয়গুলোর ব্যাপারে উদাসন এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন। এসব কাজের মাধ্যমেই এটা প্রকাশ পেয়েছে। চাল পাচ্ছে না, চাল দিচ্ছে এবং সেই চাল নিয়েও সুনাম তো হচ্ছে না বরং সমালোচনা হচ্ছে। এটা তো বড় দুর্ভাগ্যের ব্যাপার।
চালের বাজারের অস্থিরতা কমাতে হলে আগে স্বার্থসংঘাত বন্ধ করতে হবে। রাজনীতিবিদকে রাজনীতিবিদের মধ্যে রাখতে হবে এবং ব্যবসায়ীকে ব্যবসায় রাখতে হবে। ব্যবসায়ীকে রাজনীতিবিদ হতে দেওয়া যাবে না। এবং রাজনীতিবিদকে ব্যবসায়ী হওয়া যাবে না। মূল কথা আসলে এটাই।
পরিচিতি: জ্বালানি বিশেষজ্ঞ
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা: আশিক রহমান