এলএনজি আমদানি; শুরুতেই গ্যাস দেওয়া হবে শিল্প খাতে
মোনা হক : তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানির শুরুতেই সরকার শিল্পকারখানা এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস দেবে। সোমবার পেট্রোবাংলায় অনুষ্ঠিত এলএনজি আমদানি ও মূল্য নির্ধারণের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে জ্বালানি বিভাগ ব্যবসায়ী নেতাদের এ কথা জানিয়েছে। ইত্তেফাক
সভায় বলা হয়, এলএনজি আমদানির পর সব ধরনের কর অবকাশ দিয়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে গ্যাসের মূল্যহার নির্ধারণ করলে বিভিন্ন খাতে ২৩ থেকে ১০৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে পারে। এতে গ্যাসের দাম বাড়ানো ছাড়া বিকল্প থাকবে না। এ কারণে এলএনজি আমদানিতে ভ্যাটও প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বৈঠকে ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে এলএনজির দাম সহনীয় রাখার অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে স্বাভাবিক সরবরাহের নিশ্চয়তাও চেয়েছেন তারা। জ্বালানি বিভাগ গ্যাস সংকটকে ‘গুডবাই’ বলতে এলএনজি আমদানিকেই একমাত্র পন্থা বলে মনে করছে। বৈঠকে জানানো হয়, এলএনজি আমদানির শুরু থেকেই সরকার সব ধরনের কর তুলে নিচ্ছে।
শুধু ১৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে দেশের সরবরাহ করা গ্যাসের সঙ্গে এলএনজিকে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি ধরে সম্ভাব্য দর প্রস্তাব করা হয়েছে। বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সবচেয়ে বেশি দাম বৃদ্ধি হতে পারে শিল্পের গ্যাসের। এ শ্রেণীর গ্রাহকদের গ্যাসের দাম ১০৫ শতাংশ বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। এখন ১৭ দশমিক শূন্য ৪ টাকায় শিল্প মালিকরা গ্যাস কিনছেন। এলএনজি এলে দাম ১৭ দশমিক ৯৬ টাকা বেড়ে হবে ৩৫ টাকা ঘনমিটার। এর পরই রয়েছে বাণিজ্যিক খাত, এখানে ৯২ শতাংশ দর বৃদ্ধি হতে পারে। বাণিজ্যিক গ্রাহকরা এখন ৭ দশমিক ৭৬ টাকায় প্রতি ঘনমিটার গ্যাস কিনছেন, যা ৭ দশমিক ১৪ টাকা বেড়ে দাঁড়াবে ১৪ দশমিক ৯০ টাকায়। এ ছাড়া এখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দর ৩ দশমিক ১৬ টাকা, এলএনজির দর সমন্বয় করলে দর হবে ৪ দশমিক ৯৯ টাকা। বর্তমানের চেয়ে ঘনমিটারে ৫৭ শতাংশ অর্থাৎ ১ দশমিক ৮৩ টাকা দাম বাড়বে।
একইভাবে সার কারখানায় ৭৫ শতাংশ দাম বেড়ে ২ দশমিক ৭১ টাকা ঘনমিটার গ্যাসের সম্ভাব্য দর হবে ৪ দশমিক ৭৫ টাকা। ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শতকরা ৫৫ ভাগ দাম বাড়তে পারে। এখানকার ৯ দশমিক ৬২ টাকা ঘনমিটারের গ্যাস তখন ৫ দশমিক ৩৬ টাকা বেশি দিয়ে ১৪ দশমিক ৯৮ টাকায় কিনতে হবে।
এ ছাড়া সিএনজিতে ৬১ শতাংশ অর্থাৎ ১৯ দশমিক ০৭ টাকা বাড়িয়ে ৩২ টাকা ঘনমিটারের গ্যাস ৫১ দশমিক ৭০ টাকা, চা বাগানে ৬৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৪২ টাকার গ্যাস ১২ দশমিক ১০ টাকা এবং গৃহস্থালিতে ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৯ দশমিক ১০ টাকার গ্যাস ১১ দশমিক ২০ টাকা ঘনমিটার হতে পারে।
বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, এলএনজি মিশ্রিত গ্যাসের ব্যবহার ও মূল্য নির্ধারণে দীর্ঘমেয়াদি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন। টেকসই মূল্য ব্যবস্থাপনা থাকলে ব্যবসায়ীদের পরিকল্পনা স্থির করতে সহজ হবে।
বৈঠকে বলা হয়, ২০১৮ সালে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করা হলে তা চট্টগ্রাম এলাকায় বিরতণ করা হবে। এরপর আরও ৫০০ মিলিয়ন আমদানি শুরু হলে তা দেশের মধ্যাঞ্চলে সরবরাহ করা হবে। এতে বলা হয়, ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হলে সেখানে সরবরাহ করা ২৩০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট অন্য এলাকায় সরবরাহ করা যাবে।