দ্বীনের অপর নাম কল্যাণ কামনা
দিদার-উল আলম
মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে সমাজের প্রতি তার কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। নিজের অর্থ-সম্পদ সমাজের লোকদের জন্য অকাতরে খরচ করেন এমন সমাজ সেবক, শিক্ষানুরাগী, দানশীল ব্যক্তির সংখ্যা কিন্তু কম নয়। অর্থ-সামর্থ্য না থাকলেও মানুষকে উপদেশ বিলিয়ে থাকেন এমন মহৎ ব্যক্তিও আমাদের সমাজে আছেন। নিজের যোগ্যতা অর্থ সামর্থ ও বিচার বুদ্ধি দিয়ে আমাদেরকে যেমনি অন্যের উপকারে এগিয়ে আসতে হবে, তেমনি ধর্মীয় ব্যাপারেও নিজের সহ অন্যের হিত কামনায় কাজ করতে হবে। আমরা যারা বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করছি এবং এ ক্ষেত্রে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাকে প্রাধান্য দিচ্ছি, তারা এ সাথে আরো একটি মহৎ ও স্থায়ী কাজকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। কি সেই মহৎ ও স্থায়ী কাজ? আল্লাহও আখিরাত বিশ্বাসীদের জন্য সে কাজটি হচ্ছে ধর্মীয় কাজ। অর্থাৎ আগের সব সেবাগুলো ঠিকই থাকবে শুধু এ সাথে যোগ হবে ধর্মীয় কিছু সেবা। একজন নিঃস্ব নিরীহ লোককে ক্ষুধা-তৃষ্ণার যন্ত্রনা আর রোদ্র-বৃষ্টি ও শীতের কষ্ট থেকে এতে যেমনি বাঁচানো যাবে, তেমনি তাকে রক্ষা করা যাবে চিরস্থায়ী জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে। অন্যভাবে বলা যায় অসহায় মানুষটির সাময়কি-অস্থায়ী উপকারের পাশাপাশি স্থায়ী উপকারের ব্যাপারেও আমাদেরকে মনোনিবেশ করতে হবে, তাকে ধর্ম পালনে উদ্বদ্ধ করতে হবে, বুঝাতে হবে। একাজদ্বয় আমাদের উপর আরোপিত দায়িত্বও বটে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা ভাল ও খোদাভীতি মূলক কাজে, খোদা ভীতির পথে একে অপরকে সহযোগিতা কর” (সূরা আল মাযিদা- ২ নং আয়াত)।
ধর্ম বা দ্বীনের অর্থ কী? রাসূল (সাঃ) বলেন, “দ্বীন হচ্ছে কল্যাণ কামনা/উপদেশ/পরামর্শ (তিন বার তিনি কথাটি বলেছেন)। আমরা (ছাহাবীগন রাঃ) বললাম, কার জন্য? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসুলের জন্য, মুসলমান নেতৃবৃন্দের জন্য এবং সমস্ত মুসলমানের জন্য (মুসলিম)। সমাজ সেবার পাশাপাশি ধর্মীয় সেবায় আমাদের প্রতি রাসূল (সাঃ) সুস্পষ্ট নির্দেশ হচ্ছে, “আমার পক্ষ হতে একটি বাক্য হলেও পৌঁছে দাও।” জাগতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের পাশাপাশি সময় সুযোগ করে আমাদেরকে ধর্মীয় পড়া পড়তে হবে জানতে হবে, বলতে হবে, জানাতে হবে, লিখতে হবে, প্রচার করতে হবে। তা না হলে বিবেকের কাঠগড়ায় যেমনি আসামী হতে হবে, একই ভাবে আসামী হতে হবে ধর্মের কঠাগড়ায়ও। কারণ রাসূল (সাঃ) বলছেন, “যেসব লোক এমন কোন বৈঠকে অংশ গ্রহণের জন্য ওঠে আসে যেখানে আল্লাহর নাম স্মরণ করা হয় না (ধর্মের কথা মোটেই বলা হয় না) তারা যেন মৃত গাধার লাশের স্তুপ হতে ওঠে আসে। এরূপ মজলিস তাদের জন্য আফসোসের কারণ (মুসলিম), “যদি কোনো দল কোনো বৈঠকে বসে আল্লাহর জিকির না করে এবং তাদের নবীর উপর দরূদ ও পাঠ না করে (কোরআন ও হাদীসের কথা না বলে, ধর্মের কথা স্মরণ না রাখে) তাহলে তাদের সে বৈঠক তাদের পক্ষে হতাশার কারণ হবে। আল্লাহ ইচ্ছে করলে তাদেরকে শাস্তি নিবে অথবা তাদের ক্ষমা করবেন (আবু দাউদ, আহমদ)।