ধর্মীয় বিধি-নিষেধ পালনের মাধ্যমেই সামাজিক অবক্ষয় রোধ সম্ভব
সামাজিক অবক্ষয় রোধে ধর্মীয় বিধি-নিষেধ পরিপালনের বিকল্প নেই। কঠোর নিয়মনীতি আর সমাজ সংস্কারে নতুন নতুন চিন্তার সংযোজনে কোনো কালেই সামাজিক অবক্ষয় রোধ সম্ভব নয়। ধর্মীয় অনুশাসন এবং এর মূল শিক্ষা সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমেই সামাজিক অবক্ষয় রোধ হতে পারে। এর পাশাপাশি নিয়মতান্ত্রিকতা এবং সমাজ সংস্কার মূলক বুদ্ধিভিত্তীক চিন্তাশীলতা সামাজিক এ অবক্ষয় রোধে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। ধর্মের সঠিক এবং বিশুদ্ধ শিক্ষা না পেয়ে শুধুমাত্র সমাজ ভাবনার বাহ্যিক সংস্কার মূলক কথাবার্তা কোন অপরাধীর অন্তরে স্থায়ী রেখাপাত করেনা। খুব স্বাভাবিকভাবেই নির্দিষ্ট একটা সময়ের পরে এর রেশ কেটে যায়। ফলে, নতুন অপরাধের ধারাপাত হয়ে অপরাধীর কালো চোখে।
ধর্মীয় অনুশাসন আর ধর্মের মূল সঠিক শিক্ষার অভাবে, মানুষের অন্তর আজ কলুষিত। বিপন্ন মানবতা। নামে মাত্র ধর্মের পৈতে পায়ে জড়িয়ে দিব্বি মানবতাকে লাথি মারছে মানুষ। সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে সবরকমের হিং¯্রতা, নোংরামি আর পাপাচারিতা। অন্ধকারে ঢেকে আছে পুরো সমাজের আকাশ। নরবলি হয় প্রতিনিয়ত মানুষের বিবেকের কাঠগড়ায়। ঠিক-বেঠিক, সত্য- মিথ্যার কোন বালাই নেয়। এ সমাজ যেন এক জতুগৃহ। গায়ে গায়ে বাড়ি খায় অপরাধীর বিষদাঁত। সঠিক-সুন্দর ও নাগরিক জীবনের নিরাপত্তায় ব্যার্থ আজকের সমাজ। কিন্তুু কেন সমাজের এ অবক্ষয়? কোন ধারায় পরিচালিত হচ্ছে আমাদের সমাজের পথ। এর থেকে কি পরিত্রাণের কোন উপায় নেই? নাকি এভাবেই সামাজিক অবক্ষয়ে বিধ্বস্ত হবে মনুষ্য সভ্যতা। বন্য পশুদের মত আচরণ হবে আমাদের ! এটা কোন বড় চিন্তা বা কোন মহা-চিন্তার বিষয় নয়। চিন্তার বিষয় না এটা এ কারণে যে, শুধুমাত্র চিন্তা আর বুদ্ধিজীবিদের সমাজ ভাবনাকে সামনে নিয়ে কোন সেমিনার অথবা ‘সামাজিক অবক্ষয় রোধে গোলটেবিল বৈঠক’ আয়োজন শেষ করেই মনে করা হয় সমাজ উদ্ধার হয়ে গেছে। বরং আজকের সমাজের দূরাবস্থা সামান্য একটু উপলব্ধি করতে পারলেই, দিবালোকের মত স্পষ্ট হবে আসলে সমস্যা কোথায় ?
এই যে, সমাজে দিনের পর দিন লাগাতার খুন, গুম,ধর্ষণ,পালাক্রমে ধর্ষণ, চলন্ত বাসে ধর্ষণ, ধর্ষণ পরবর্তী আবার নৃশংস হত্যা। রাহাজানি, ডাকাতি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি হচ্ছে। যেন, সমাজের প্রতিটা স্তরে খুব লিরিকাল ভাবে এগুলো সাজানো। প্রতিনিয়ত এগুলো ঘটে যাওয়া যেন স্বাভাবিক। এগুলো কেন হচ্ছে। কারা করছে, কেন করছে, এ বিষয় গুলো সামনে এনে পরিশোধন পন্থায় খতিয়ে দেখা দরকার । আর এ বিষয়গুলো সামনে নিলে প্রথমেই আমরা দেখতে পাই, একটা মানুষ (তার অন্তর) আলোকিত ও পরিশুদ্ধি হয় ধর্মের সঠিক শিক্ষা দ্বারা। নিয়মমাফিক চলা ফেরার মাধ্যমে ব্যক্তি ও সামাজিকভাবে একটা শৃঙ্খলাবোধ চলে আসে। ভালো-মন্দের পার্থক্য করার বাস্তব ও সঠিক জ্ঞানার্জন হয়। বিপরীতে, ধর্মের মূল শিক্ষা ও বিধী-বিধান না মেনে চললে এক পর্যায়ে গিয়ে সে আবশ্যকীভাবে নিজ কু-মনোবৃত্তির প্ররোচনার স্বীকার হয়। পাপের সংজ্ঞা তার ভেতরে হয়ে বিস্মৃত। কোন প্রকার অপরাধবোধ জাগ্রত হয়না মনের ভেতর। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি সংক্রমিত হতে থাকে এ ব্যাধী। পাপের ঐশ্বর্যে ডুবে যায় মন। কালিমা লেপন হয় আতœার শরীরে। সমাজে ছড়িয়ে পড়ে তার ও তাদের অপরাধ ব্যাধী। সমাজ স্বীকার হয় সামাজিক অবক্ষয়ের। জন নিরাপত্তা হয় অনিশ্চিত।
মোট কথা, ধ্রুব সত্য ও বাস্তবতা হলো, সমাজের প্রতিটা সেক্টরে রাষ্ট্রীয়ভাবে যদি ধর্মের সঠিক শিক্ষা আর অনুশাসনের বিস্তার না ঘটানো যায়। তাহলে শুধুমাত্র সমাজ ভাবনা দ্বারা ‘সামাজিক অবক্ষয়’ প্রতিকার করা কোনকালে কোনভাবেই সম্ভব নয়। ধর্ম হচ্ছে মানুষের সঠিক-সুন্দর ও পবিত্রতার সাথে পৃথিবীতে শান্তি শৃঙ্খলতার সাথে বেঁচে থাকার খোদা প্রদত্ত তথা ঐশ্বরিক পন্থা। এর নিয়মনীতি সমস্তটাই তার পক্ষ থেকে নির্ধারণ করা। তার প্রেরিত ঘোষকদের প্রত্যেকের জীবনে এর বাস্তবিক পুনঃপুন পালনের মাধ্যমেই এর বাস্তবতা ফুটে ওঠেছে। সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে প্রেরিত পয়গম্বরেরা নিজ নিজ জীবদ্দশায় ধর্মের শিক্ষায় সমাজ বিনির্মাণ করে গিয়েছিলেন। তাদের সমাজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেছিল খোদা প্রদত্ত ধর্মকে কেন্দ্র করে। তাই তারা প্রত্যকেই সমাজে জড়িয়ে থাকা পূর্বেকার সবটুকু অন্ধকার সরিয়ে এক আলোকোজ্জ্বল সমাজ বিনির্মাণ করেছিলেন। তারা আগের সামাজিক অবক্ষয় দূর করে নিরাপত্তা পূর্ণ জীবনকালের প্রতিশ্রুত দিতে পেরেছে।
অতএব, আমরাও যদি আমাদের সমাজকে রাসূলের আদর্শিক তথা ধর্মীয় সঠিক শিক্ষা ও এর অনুশীলন-অনুশাসনের অনুগামী করতে পারি। তাহলে আমাদের সমাজের এ সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব। সমাজ ভাবনার ধূ¤্রজাল আর কতকাল বিছিয়ে রাখা যাবে। বরং সত্যিকারের সমাজ ভাবনাটা ভেতরে জেগে ওঠুক ধর্মের মূল শিক্ষাকে সামনে রেখে। সমাজ ভাবনায় যাদের চিন্তা চৈন্তন্য পূজি করে সামাজি অবক্ষয় রোধের কর্মকান্ড সাজানো হয়। তাদের ভাবনা যেন, ধর্মীয় শিক্ষাকে বাঁধা দেয়া আর অনুশীলন ধ্বংসকারী না হয়। তাহলে, সামাজিক অধপতনের চিহ্ন টুকুও খুঁজে পাওয়া যাবে না।