সুচির ভাষণে সংকট দূরিকরণের কোনো প্রেসক্রিপশন নেই
ব্যারিস্টার এম.সরোয়ার হোসেন
মিয়ানমার সরকারের কার্যত সরকার প্রধান অং সান সুচি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। সুচি তার ভাষণে রোহিঙ্গাদের অত্যাচার, নির্যাতন ও গণহত্যার বিষয়গুলো এড়িয়ে গেছেন। আসলে অং সান সুচি একটা মিয়ানমার আর্মির পাপেট। তার ক্ষমতাটা টিকে আছে মিয়ানমার আর্মির ইচ্ছা বা অনিচ্ছার উপরে।
রাখাইনে আজকে কী মানবতার হাহাকার সৃষ্টি হলো বা সেখানে কী মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হলো, তার চেয়ে বড় অগ্রাধিকার হচ্ছে অং সান সুচির ক্ষমতাটা ধরে থাকা। অং সান সুচি ক্ষমতা ধরে রাখার স্বার্থেই কোনো অবস্থাতেই দেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যেতে আগ্রহী নয়। এমনকি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে তাকে পুনরায় গৃহবন্দী করতে পারে অথবা ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কাও আছে। অতএব, সুচির কাছে এখন ক্ষমতায় থাকাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
অং সান সুচি ১৯৯১ সালে যে পরিপ্রেক্ষিতে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন, আজকে তার সেই মন-মানসিকতা আর নেই। তার মন-মানসিকতায় আজ অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি বললেন যে, ৫০ শতাংশ মুসলমান দেশটিতে আছে আর ৫০ শতাংশ চলে গেছে। এটা তিনি কীভাবে বললেন? তিনি এই তথ্য কোথায় পেলেন? বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন এবং আল জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গুলো যেখানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর গণহত্যা, নির্যাতন এবং দুঃখ-দুর্দশার প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরছে, সেখানে তিনি কিনা বললেন যে, রাখাইনে কী ঘটেছে সেটা আমার জানতে হবে।
সুচি জানেন যে, রাখাইনের সহিংসতার পেছনে সেনাবাহিনী জড়িত। তাই তিনি কৌশলে এই রোহিঙ্গা বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং তাদের কাছ থেকে ভালো রেসপন্স আসছে। তবে এটা শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক মিডিয়া গুলোর কল্যাণেই সম্ভব হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতার দৃশ্য আন্তর্জাতিক মিডিয়া গুলো থেকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে।
সুচি তার ভাষণে আরেকটি কথা বলেছেন, আন্তর্জাতিক চাপে ভীত নয় মিয়ানমার। তার এখানে দাম্ভিকতা প্রদর্শণের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে সেনাবাহিনীকে এপ্রিসিয়েট করা। মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অবস্থান এবং দাম্ভিকতাই প্রকাশিত তার হলো তার এই ভাষণে। সুচির ভাষণ সাধারণ ভাবে নরম মনে হলেও, বিশ্ব প্রত্যাশাকে পূরণ করতে পারেনি। আজকে যে মানবতার সংকট সৃষ্টি হয়েছে, সেটা দূরিকরণের জন্য কোনো প্রেসক্রিপশন দেয়নি সুচি। এমনকি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কোনো পরিকল্পনার কথাও বলেননি তিনি।
পরিচিতি: সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও আইনজীবি, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট।
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ