ইউজিসিকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেওয়া প্রয়োজন
ড. এএসএম আতীকুর রহমান
আমাদের দেশের মানুষের একটা সহজাত প্রবৃত্তি, তারা উচ্চশিক্ষা চায়। এই উচ্চশিক্ষা কাজে লাগবে কি লাগবে না, বা কতখানি লাগবে তা চিন্তা না করেই মানুষ উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী হয়। উচ্চশিক্ষার্থে কেউ কেউ বিদেশেও গমন করে। তাই উচ্চশিক্ষার চাহিদা বিপুল। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে এই চাহিদা পূরণ করা আদৌ সম্ভব নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও প্রয়োজন আছে। তবে এটাকে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে না নিয়ে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্ব ব্যাংকের ফান্ডে সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান নির্ণয় নিয়ে একটা গবেষণা হচ্ছে। সেখানে ফোকাস হচ্ছে, কোয়ালিটি এশিওর। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোয়ালিটি এশিওর করতে একরিডিটেশন কাউন্সিলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, ইউজিসিকে উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য ইউজিসিকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেওয়া প্রয়োজন। এখানে মুশকিলটা হল যে, সমস্ত কর্তৃপক্ষ যারা এগুলোকে দেখভাল করবেন, তাদের হাতে যদি পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেয়া না হয়, তাহলে কোন একটা বিষয়ে কাংখিত লক্ষ্যে পৌছানো যায় না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল ইউজিসির। ইউজিসির যারা চেয়ারম্যান ও সদস্য হন তারা বরাবরই অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা প্রশাসক। তারা অত্যন্ত বিদগ্ধ। তাদের হাতে ক্ষমতার অল্প অংশটা থাকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি তার সম্পূর্ণ ক্ষমতাটা ইউজিসিকে দেয়, ইউজিসি একরিডিটেশন কাউন্সিলের মাধ্যমে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মান সংরক্ষণ করতে পারে। কিন্তু ইউজিসিকে যদি পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেয়া না হয় আর প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়, এটাতো কোনো সমাধান নয়। মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা সমাধান নয়। আমরা মনে করি, আমাদের দেশের তরুন সমাজ মান সম্মত উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশ এবং দেশের বাইরে অসামান্য অবদান রাখতে পারে। জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। তাই যারা এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে যুক্ত তাদেরকে বলব, শিক্ষাটাকে গুরুত্ব দিন । পৃথিবীর বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগই বেসরকারি । অক্সফোর্ড হোক, ক্যামব্রিজ হোক, র্হ্যাভার্ড হোক, সব বেসরকারি। আমরা দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো, মানসম্মত শিক্ষা দিন, যেন উচ্চশিক্ষার ব্যবসাটাও চলমান রাখা হয়। সর্বোপরি ইউজিসিকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দিতে হবে। ইউজিসির যারা চেয়ারম্যান ও সদস্য তাদের উপর আস্থা রাখতে হবে। ইউজিসি পুরো একাডেমিক ব্যাপারটা দেখার কথা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তো দেখার কথা নয়। অনুমোদন দেওয়ার পরই তাদের দায়িত্ব শেষ। আর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করা যাবে না। তাহলে এই ছাত্র-ছাত্রীগুলো অন্য দেশে চলে যাবে এবং অন্য কাজে তারা জড়িত হয়ে পড়বে। আন্তর্জাতিক বাজারের জনশক্তি চাহিদার দিক বিবেচনা করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা পদ্ধতি চালু করতে হবে।
পরিচিতি: অধ্যাপক, সকগই ও সাবেক প্রক্টর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সাক্ষাতকার গ্রহণ: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান