রোহিঙ্গা-দরদে প্রথম ক্রন্দিত : শেখ হাসিনা নয়, এমেনি এরদোওয়ান!
মাসুদ রানা
চট্টগ্রামে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রতি দরদে প্রথম অশ্রু বিসর্জনকারী নারী হচ্ছেন তুর্কি ফার্ষ্ট লেইডী এমেনি এরদোয়ান, যিনি সুদূর তুরষ্ক থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারে গিয়েছিলেন তাদেরকে সরজমিনে দেখতে। তিনি গিয়েছিলেন বৃহস্পতিবার ৭ই সেপ্টেম্বরে।
বিষয়টি আমি লক্ষ্য করে ৯ই সেপ্টেম্বর শনিবারে আমি ফেসবুকে ‘বার্মায় বাঙালি গণহত্যা : শেখ হাসিনা হতে পারেন আজকের ইন্দিরা গান্ধী!’ শিরোনামে একটি স্ট্যাটাস প্রকাশ করেছিলাম। সেখানে আমি গুরুত্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার করণীয় সম্পর্কে লিখেছিলাম। ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র কর্তৃক বাঙালি জাতির পূর্ব গণহত্যার শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা যেভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জন্যে বিশ্বমঞ্চে নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছিল, একইভাবে রোহিঙ্গা আত্মপরিচয়দানকারী বার্মার আরাকান তথা রাখাইন প্রদেশের বাঙালিরা রাষ্ট্রীয় গণহত্যার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য বিশ্বনেত্রী হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে।
ইন্দিরা গান্ধী যেভাবে প্রথমে সঠিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার সাফল্যের ভিত্তিতে সফল সামরিক পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে হিরোতে পরিণত হন, তেমনিভাবে শেখ হাসিনাও সঠিক কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে রোহিঙ্গা-সঙ্কট নিরসনে ভূমিকা রেখে বিশ্ব-রাজনীতের নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেন।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, শেখ হাসিনার সেই বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি, যোগ্যতা, দক্ষতা ও সর্বোপরি সদিচ্ছা আছে কিনা। থাকলে, শেখ হাসিনার উচিত অতিসত্ত্বর চট্টগ্রামে সফর করে সরজমিনে শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শনের মাধ্যমে নিপীড়িত মানুষগুলোর প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে যথাসাধ্য সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া।
শেখ হাসিনার উচিত হবে, তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়ে তার জন্য বিশ্বব্যাপী একটি কূটনৈতিক সফরের আয়োজন করা এবং সেই সফরে কাক্সিক্ষত সাফল্যের ক্ষেত্র তৈরি করা। আর, বিশ্বব্যাপী বাঙালিদের উচিত হবে, শেখ হাসিনার সফরকালে বার্মার গণহত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখা।
শেখ হাসিনা যদি উপরের পরামর্শ অনুসরণ করেন, তিনি অচিরেই বর্মী নেত্রী অং সন সু চি কে ইতিহাসের ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করে বিশ্ব-পরিসরে অসমান্তরাল স্টেইটসওম্যান হয়ে উঠতে সক্ষম হবেন। বিশ্ব এখন রোহিঙ্গা প্রশ্নে একজন কার্যকর বিশ্বনেতার ইতিবাচক ভূমিকা দেখতে চাচ্ছে।’
আমার লেখা প্রকাশিত হওয়ার ৩ দিন পর লক্ষ করলাম, ১২ই সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে গিয়েছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিদর্শন করতে এবং সমবেদনা জানাতে। বিলম্বে হলেও শেখ হাসিনার এই পদক্ষপ সঠিক ছিল।
তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, শেখ হাসিনার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিদর্শনের আগে বৃহত্তর বাকশাল পরিবারের যে লোকেরা তুর্কি ফার্স্ট লেইডীকে নিয়ে নানা রসালো মন্তব্য ও রোহিঙ্গাদের প্রতি প্রত্যাখ্যান ও ঘৃণা প্রকাশ করছিলেন, তারা শেখ হাসিনার রোহিঙ্গা-পরিদর্শনের পর ১৮০ ডিগ্রিতে ঘুরে রোহিঙ্গা-দরদি হয়ে উঠল এবং বিনিময়ে শেখ হাসিনার নোবেলপ্রাইজ প্রাপ্তির প্রার্থিতা নিয়ে বাজার গরম করতে থাকল!
লন্ডন, যুক্তরাজ্য