সংকট সমাধানে জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল অত্যন্ত সাহসী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য জাতিসংঘে একটি সুনির্দিষ্ট এবং সুচিন্তিত ভাষণ দিয়েছেন। তিনি তার ভাষণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে কিছু সুনিদিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। যেহেতু বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকট বা রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নতির জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছেন বিশ্বব্যাপী, সেই দিক থেকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বা ভাষণটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
বলা যায় যে, শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, এর জন্য সারা বিশ্বের মানুষই অধির আগ্রহ সহকারে অপেক্ষা করেছিল। কারণ, এই ভাষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অবস্থানের বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ যেহেতু সাফার করছে, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশের একটি বৈধ আবেদন এবং অধিকার আছে বিষয়টি নিয়ে একটি দাবি জানানোর। ভাষণের মাধ্যমে লক্ষ্য করেছি রোহিঙ্গাদের দুরাবস্থার কথাটা এখন সবাই জানে, বিশ্ব গণমাধ্যম থেকে বিভিন্নভাবে উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী তার নিজের এবং রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ব্যক্তিগত কথাও বলেছেন। কিন্তু যে বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে, সেটি হলো এ সমস্যার সমাধান করা যায় কীভাবে? সেটিই কিন্তু মূল বিষয়। কারণ, রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার সামরিক জান্তা বা সেনাবাহিনী অতীতেও আক্রমণ করেছে, সহিংসতা চালিয়েছে এবং গণহত্যা চালিয়েছে।
কিন্তু বিশ্বজনমতে সেভাবে সাড়া জাগাতে পারেনি। জনমত বলা যায়, ঘুমন্ত ছিল। সেই জনমত এখন জেগেছে এবং তারা জানে। এখন গণমাধধ্যমও খুব সোচ্চার। এখন যেটা করতে হবে, যেটি ভাষণের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে এসেছে। তাহলে ভবিষ্যতে কী করণীয়? তিনি পাঁচটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে কথা বলেছেন। এ ধরনের সংকট মোকাবেলাায় স্বল্পকালীন, মধ্যমেয়াদী এবং দীঘমেয়াদি সমস্যা সমাধান করা দরকার। তার বক্তব্যে সেটি কিন্তু আসছে। স্বল্পমেয়াদে আমরা যেটা যায় যে এই মুহূর্তে মিয়ানমারের রাখাইনের ভেতরে আর যারা রোহিঙ্গারা আছে এখনও ২৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী আছে। এই যে ২৫ শতাংশ আছে এবং যারা এখনও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে বন্ধ করা এটি অত্যন্ত জরুরি। সেটি ভাষণে এসেছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে যে শরণার্থীদের আশ্রয় নিয়েছে, তাদের জন্য ত্রাণ তৎপরতার বিষয়গুলো উঠে এসেছে। স্বল্প মেয়াদি গুরুত্বপূর্ণ। আর মধ্য মেয়াদে যেটা আমরা জানি তাদেরকে পুনরায় ফিরিয়ে নেওয়া। এটি খুব জরুরি। ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অতীতে এই পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা কিংবা বিশ্বেরও পর্যায়ে যেসব কথা বার্তা হয়েছে সেটি মূলত তাদেরকে পুনরায় নিজদেশে ফিরে নেওয়াটাই মূল লক্ষ্য ছিল। বাংলাদেশে সেইভাবে কাজ করছে। এবার যেটা প্রধানমন্ত্রী প্রস্তবারে এবং বিভিন্ন আলোচনায় উঠে আসছে। দীর্ঘ মেয়াদি রোহিঙ্গারা যে ওখানে যাবে এবং তাদের জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তোলা। নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তাব করছে কিন্তু সেইফ জোনটা হচ্ছে কিন্তু একটি এটির মূল যে অন্তর্নিহিত অর্থ হলো যে এই রোহিঙ্গারা ফিরে যাবে বা যারা ওখানে আছে তাদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এবং এই নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে তাদের ওপর আবার সহিংসতা, তাদের ওপর আবারও আক্রমণ এলে আবার সংকট তৈরি হবে। এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘণের মাত্রা আরও বাড়তে থাকবে। ফলে এই তাদের জন্য সেইফ জোন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সর্বশেষ যে বিষয়টি জোর দিয়েছে আনান কমিশনের সুপারিশগুলো। এই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন। এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার অংশ। এবং এটির ব্যাপারে বিশ্বে একটি জনমত তৈরি হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু সব দেশেই কিন্তু আনান কমিশন যেটা মিয়ানমার নিজেরাও তারাও এটার অংশীদার। এই রিপোর্ট তাদেরই যেটা বলা হয় এ্যাডভাইসরি কমিশন। মিয়ানমারেই তৈরি করেছে। এর ফলে যে রিপোর্ট তৈরি হয়েছে সেটাকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এবং সেটি নিয়ে আলোচনা হলে কিন্তু আর কূটনৈতিক চাপ বা অন্য কিছু বলার সুযোগ নেই। ফলে প্রধানমন্ত্রীকে এটিকে বাস্তবায়নের কথা বলেছেন। আমি মনে করি রোহিঙ্গা সমস্যা বা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গুলো নেওয়া দরকার। এর জন্য তার একটা গাইড লাইন বা একটি প্রস্তাব উঠে আসছে। এবং এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক মহলের বা জাতিসংঘ।
সেই দিক থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব মহলকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, রোহিঙ্গা শুধুমাত্র বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। এবং সেই জায়গাটাতে তিনি জোর দিয়েছেন। এবং বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বিভিন্ন রাষ্ট্রের যে অবস্থান সে অবস্থান যেন পরিবর্তন হয়, তারা যেন রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ায় সে আকুতিটা ছিল।
পরিচিতি: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা: আশিক রহমান