ভারত ও চীনকে আমাদের কথাটা স্পষ্ট করে বলা দরকার
আফসান চৌধুরী
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে পাঁচ দফা প্রস্তাবের মধ্যে একটা বিষয় এসেছে প্রস্তাব আকারে। বাকিগুলো তো তিনিসহ সারা পৃথিবীর নেতৃবৃন্দ বলেছেন। তারা বলেছেন, গণহত্যা বন্ধ করা উচিত এবং একটা অঞ্চল গড়ে তোলা দরকার যেখানে মিয়ানমার থেকে চলে আসা রোহিঙ্গারা থাকতে পারবে। এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহলে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না, যাতে মনে হয় এ ব্যাপারে তাদের কোনো আগ্রহ আছে। মিয়ানমারের সরকার এবং রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক ইতিহাস অনেক জটিল, এখানে অনেকগুলো শক্তি কাজ করে। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বের করে দেওয়ার ঘটনা ঐতিহাসিকভাবেই চলে এসেছে, এটা আজকের ইতিহাস নয় এটা দীর্ঘদিনের ইতিহাস। সেই ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করে আমি বুঝতে পারি না, মিয়ানমার সরকার এই রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করবে, বিতাড়িতদের আশ্রয় দিবে। যাদেরকে নিজের বসতভিটা থেকে বের করে দিচ্ছে, গুলি করে হত্যা করছে তাদেরকে কি মিয়ানমার সরকার আবার অধিকার ফিরিয়ে দিবে? সেই রকম চাপ কি প্রয়োগ করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল থেকে? প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত আর চীনের অবস্থান সঠিক নয়। ধীরে ধীরে বোঝা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ সরকার বুঝতে পেরেছে এই বিষয় নিয়ে চুপ করে থেকে লাভ নেই। আমাদের অসুবিধাটা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মহলে চাপ দেওয়ার মতো আমাদের কোনো ব্যবস্থা নেই। সঠিকভাবে সংকটটি তুলে ধরা এবং চাপ দেওয়ার অভাবেই এই সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। আমরা যদি একটু দূরদর্শীভাবে লক্ষ্য করি তাহলে দেখা যাবে এই সমস্যাটা সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু হয়ে এখনো চলছে। মিয়ানমার সরকার মনে করে তাদের ভূমিতে বাইরের লোকেরা এসে আছে। আমাদের দেশের তুলনায় মিয়ানমারে জাতিগত বিদ্বেষ অনেক বেশি। এটা একটা বড় সমস্যা। এই সংকট নিরসনে আমার মতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের আগামি বলে আর কিছু নেই। এখন দেখা যাবে, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে কিছুটা শিথিল হবে, পরবর্তীতে আবার একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। রাখাইনের মানুষজনও মিয়ানমারের সেনাবহিনীকে বা সরকারকে অপছন্দ করে। মিয়ানমারের সেনাবহিনী তাদের দেশের জনগণের উপর কম নির্যাতন করেনি। দেখা যাচ্ছে যে চাপটা আমরা প্রয়োগ করতে পারছি না। রোহিঙ্গারা যদি তাদের দেশে ফিরে না যায়, তাহলে এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমরা কি করব? এদের আশ্রয়ের জন্য তাহলে আন্তর্জাতিকভাবে অর্থ, খাদ্য, সহায়তা সংগ্রহ করতে হবে। এদেরকে বিভিন্ন ধরনের নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট দেওয়া উচিত। এদেরকে তো কাজে লাগাতে হবে, তা না হলে এভাবে বসে বসে খেলে তো এরা কোনো কাজে আসবে না। এখান থেকে কিছু সংখ্যক আবার ফেরত যাবে কিন্তু সেই সংখ্যা সীমিত। আরেকটা বিষয় হলো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আমাদের বর্ডারে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করা উচিত, আসলে সেখানে কি হচ্ছে? কী করা দরকার? দরকার হলে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া উচিত। এই যে ধারণাটা করা হচ্ছে যে, মিয়ানমার আমাদের কথা শুনবে, এটা ঠিক নয়। মিয়ানমার শুনতে পারে চীন আর ভারতের কথা। চীন ও ভারতের কথা যেহেতু শুনতে পারে, সেক্ষেত্রে চীন এবং ভারতের সাথে আমাদের কথাটা স্পষ্ট করে বলা দরকার। তাদের সাথে আলোচনায় বসা উচিত। তাদের বুঝাতে হবে। তারা সহায়তা না করলে মিয়ানমার সরকার এটা করতে পারত না। চীন, ভারত মিয়ানমারকে সহায়তাও দেবে, আবার তাদের দেশে রোহিঙ্গাদের ঢুকতে দেবে না, উল্টো আমাদের দেশে ঢুকার ব্যবস্থা করে দিবে, এটা তো গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের পক্ষ থেকে আসলে পর্যাপ্ত কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
পরিচিতি: গবেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি
সম্পাদনা: আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ