পাকিস্তান ছাড়া বিকল্প জোটের দিকে ঝুঁকছে ভারত সার্ক সম্মেলন নিয়ে এবারও অনিশ্চয়তা
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে এবারও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত বছর নভেম্বরে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আয়োজক পাকিস্তানকে ভারত-বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে সম্মেলন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। সার্কের চার্টার অনুযায়ী, সার্কভুক্ত দেশের কোনো একটি দেশ সম্মেলনে উপস্থিত হতে অস্বীকৃতি জানালে তা এমনিতেই স্থগিত হয়ে যায়। এবারও সার্ক সম্মেলন বিষয়ে ভারত নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে।
গতকাল এ সংক্রান্ত সংশয় প্রকাশ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারও সম্মেলন করা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রে তারা জানিয়েছে, ভারত-পাকিস্তানের পরস্পর শত্রুতার জের ধরে কার্যত অচল হয়ে থাকা সার্ক সম্মেলন এবারও আলোর মুখ নাও দেখতে পারে।
কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, সার্ক সম্মেলন সাধারণত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হলেও এখন পর্যন্ত সম্মেলনটির আয়োজন নিয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপের কথা জানা যায়নি। গত শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে সার্ক দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্রন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। ধারণা করা হয়েছিল সেই বৈঠকে সার্ক সম্মেলন বা সার্ককে কার্যকর করতে কোনো আলোচনা হবে। কিন্তু আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
জানা গেছে, সার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সুষমা স্বরাজ এ বিষয়ে কিছুই না বলে পাশ কাটিয়ে যান। তিনি প্রথমেই সন্ত্রাস দমনের উপর জোর দেন। সুষমা বলেন, আঞ্চলিক সমৃদ্ধি, যোগাযোগ ও সমন্বয়ই কেবল শান্তি ও নিরাপত্তা আনতে পারে। কিন্তু এ অঞ্চলে গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে। ভারত সব রকমভাবে সন্ত্রাস দূর করবে, এটা এ অঞ্চলের স্থায়িত্বের জন্য প্রয়োজনীয়।
জানা গেছে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের বিভিন্ন পার্শ¦ বৈঠকে সুষমা মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা ও বাণিজ্য চুক্তি প্রভৃতি না থাকার সমালোচনা করে বলেন, সার্ক তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ও সার্কভুক্ত দেশগুলোর কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সার্কের এ অচলাবস্থায় ভারত বিমসটেকের মাধ্যমে দাঁড়াতে চাইছে। যেখানে পাকিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশই রয়েছে। ফলে এটি মূলত ভারতের কর্তৃত্বাধীন পাকিস্তানবিহীন একটি সার্ক হয়ে উঠেছে। এছাড়া বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল) নামে রেল ও জ্বালানি লেনদেন বিষয়ক একটি বিকল্প সমন্বয় জোটও গড়ে তোলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ওয়ালিউর রহমান বলেন, সার্ক সক্রিয়ভাবে তেমন কিছু করতে পারেনি। সার্ক সম্মেলন হওয়াটা সার্কভুক্ত দেশগুলোর সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। তবে আমি মনে করি, সার্ক এবং পাকিস্তানকে ছাড়াও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বিবিআইএন কাজ করছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, সার্ক সক্রিয় হোক এটা বাংলাদেশ চায়। আমরা কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছি। গতবারও সার্ক না হওয়ার জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়। পাকিস্তান জোটভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে যে আচরণ করেছে, সে কারণেই সার্ক সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব হোসেন