ইসলামে নারীর সম্মান
মানব জীবনে দুঃখ কষ্ট,পরিশ্রম ও সাধনার মাঝে একটু সুখের অনুভূতি, একটু খানি হাসির ঝিলিক, হালকা আনন্দ স্ফুর্তি, একটু সুখ ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে হয়, এই তো বিনোদন। আর এর প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশী। ইসলামের মধ্যেও বৈধ সীমার ভিতরে আনন্দ ও চিত্ত বিনোদন রয়েছে। রাসুল (সা.) মাঝে মধ্যে হাস্য-রসিকতার মাধ্যমে চিত্ত বিনোদন করতেন যা অনেক হাদিস দ্বারা প্রমানিত। তবে তা হত বাস্তবেই যা সত্য,শিক্ষ্যণীয় এবং মিথ্যা থেকে মুক্ত। কিন্তু বর্তমানে চিত্ত বিনোদনের নামে চলছে অশ্লীলতার সমাহার। মক্ষিরানীদের মাতাল করা প্রলয় নৃত্য, নারী সম্পূর্ণ রুগ্ন, অর্ধনগ্ন অবস্থায় ছিনেমায়, টিভি, বিজ্ঞাপন চিত্রে। সর্বত্র চলছে বিনোদনের নামে বস্ত্র হরণের মহড়া। বিনোদন আর নগ্ন নারী আজ সমর্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। যা কিছু আনন্দ দেয় সবটাই কি চিত্ত বিনোদন বলে গণ্য হবে?? কেউ সমাজে সেবা মূলক কাজ করে আনন্দ পায়, কেউ মদ পান করে আনন্দ পায়, কেউবা কলেজ ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে সমবয়স্কা মেয়েকে উক্তত্য করে অথবা অপহরণ করে সর্বস্ব লুটে আনন্দ পায়, কেউ আনন্দ পায় সাগার তীরে সুর্য ডোবার দৃশ্য দেখে, আর কেউবা আনন্দ পায় নারীদের নিয়ে ফস্টি-নস্টি করতে। একজনের চিত্ত বিনোদনে অন্যজনের চিত্ত জ্বালা হলে তা কীভাবে চিত্ত বিনোদন হয়? আজ চিত্ত বিনোদনের নামে নারী জাতির চরিত্র নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে, নারী মুক্তি ও নারী স্বাধীনতার নামে যে লীলাখেলা শুরু হয়েছে তা নারী সমাজের জন্যে অকল্যাণকর এবং অশুভ। আর নারীমুক্তির মুখরোচক স্লোগান দিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে সভা সমিতির মঞ্চে মিহি সুরে বক্তৃতা ঝারছে, নিরাপত্তার আশ্রয় ছেড়ে মান ইজ্জত গঙ্গায় বিসর্জন দিচ্ছে, তা হচ্ছে নারী- জাতির সতীত্ব হরণের অবাধ অধিকার। নারী মুক্তি ও নারী সম্মান কোনধর্মেই দেয়নি। এক মাত্র ইসলাম ধর্মই দিয়েছে নারীর প্রকৃত সম্মান।
মহানবী (সা.) নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ঘোষণা দেন, ‘সাবধান! তোমরা মেয়েদের প্রতি সদ্ব্যবহার করো, কেননা তারা তোমাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। সাবধান! তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার যেমন অধিকার রয়েছে তেমনি তোমাদের উপরও রয়েছে তাদের অনুরূপ অধিকার। পুরুষ তার পরিবার-পরিজনের রক্ষক এবং স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের এবং সন্তানদের রক্ষণাবেক্ষণকারী।’ (রিয়াদুস সালেহিন: ২৭৬)
মানব সভ্যতা ও ধর্মের ইতিহাসে এ প্রথম নারী ন্যায্য সম্পত্তি পাওয়ার এবং রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার পায়। মহানবী (সা.) নারীদের তাদের পছন্দ স্বামী গ্রহণের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। কন্যা সন্তান হত্যা নিষিদ্ধ করে দেন। উপরন্তু কন্যা, মেয়ে, বোন লালন-পালনকারীদের জান্নাত লাভের সুসংবাদ দেন। পারিবারিক শান্তি ও সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ঘোষণা দেন। ‘মা তোমাদের জন্য জান্নাত স্বরূপ’ এই ঘোষণা পৃথীবিতে তিনিই প্রথম সুসংবাদ দেন। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বহু বিখ্যাত নারীর উল্লেখ রয়েছে, তাঁরা নিজ নিজ অবস্থানে সেরা ছিলেন। যেমন: হজরত মা হাওয়া (আ.), আদমকন্যা আকলিমা, ইব্রাহিম (আ.)-এর পতœী সারা, ইসমাইল (আ.)-এর মাতা হাজেরা, মিসরপতির স্ত্রী জুলায়খা, সুলাইমানের পতœী সাবার রানি বিলকিস, ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া, আইয়ুব (আ.)-এর স্ত্রী বিবি রহিমা, ইমরানের স্ত্রী হান্না, ঈসা (আ.)-এর মাতা বিবি মরিয়ম, নবী করিম হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাতা আমেনা ও দুধমাতা হালিমা সাদিয়া; উম্মুল মুমিনিন খাদিজা (রা.), হাফসা (রা.), আয়িশা (রা.), মারিয়া (রা.)সহ নবী পতœীগণ; নবীনন্দিনী রুকাইয়া, জয়নব, কুলসুম ও ফাতিমা (রা.); আবু বকরের কন্যা আসমা, শহিদা সুমাইয়া ও নবীজির দুধবোন সায়েমা। নারী তাঁর নারীত্বের মর্যাদা বজায় রেখেই সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন ও রাখছেন। নারী ছাড়া অন্য কেউই মাতৃত্বের সেবা ও সহধর্মিণীর গঠনমূলক সহযোগী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম নয়। মায়েদের ত্যাগ ও ভালোবাসা ছাড়া মানবীয় প্রতিভার বিকাশ ও সমাজের স্থায়িত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। মায়েরাই সমাজের প্রধান ভিত্তি তথা পরিবারের প্রশান্তির উৎস। অথচ অন্যান্য ধর্মে নারীকে শয়তান, কুলক্ষণ, জাতপাত ভেদাভেদ রয়েছে। যেমন : খৃষ্ট ধর্মের বাইবেলে নারীকে শয়তানের মাথা বলা হয়েছে, হিন্দু ধর্মে গীতা,রামায়ন ও মহাভারতে নারী সমাজের মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে সামান্যতম উল্লেখ নেই। নারীর মানবতার মুক্তি এবং তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ সতীত্ব রক্ষায় সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিধান এক মাত্র ইসলামেই রাখা হয়েছে। সতীত্ব রক্ষার প্রয়োজনেই বালেগা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিবাহের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে মাতৃজাতিকে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। ওই লোক জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবারও তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। (বোখারি)। এত মর্যাদা দেওয়া হয়েছে যে তার গায়ে হাত উঠানো তো দূরের কথা তার প্রতি পর পুরুষ চোখ তুলে যদি তাকায় তাহলে সে পুরুষের জন্যেও ইসলামে শাস্তির বিধান রয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে রয়েছে, ‘তারা তোমাদের আবরণস্বরূপ আর তোমরা তাদের আবরণ।’ (সূরা: বাকারা১৮৭)। স্ত্রীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক।’ (মুসলিম শরিফ)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি)। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করো।’ (সূরা নীসা: ১৯)। কোরআনে আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘নারীদের ওপর যেমন অধিকার রয়েছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের ওপর নারীর অধিকার।’ (সূরা বাকারা: ২২৮)। কিন্তু মানব রচিত আইনে এ স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণ হরণ করা হয়েছে। ইসলাম নারী জাতির সহজাত বৃত্তির সুষ্ঠ বিকাশ সাধন ও তার অধিকার সংরক্ষণ করার লক্ষে ভিন্ন কর্ম ক্ষেত্র নির্ধারণ করেছে এবং পুরুষের প্রতি হারাম করা হয়েছে অন্য মহিলার সংসর্গ বা কোন উপপতিœ রাখা। তাই নারী পুরুষ উভয়ে যদি মেনে চলে ইসলামের বিধি-বিধান তাহলে বিরাজ করবে শান্তিময় আবহাওয়া, যার পরশে আল্লাহ তায়ালার গায়বী সাহায্য নেমে আসবে ইনশা আল্লাহ।