আশুরার রোজার ফজিলত
রায়হান রাশেদ
আরবি বার মাসের শুরুর মাস হলো মহররম। সম্মানিত মাস। ইসলামি ইতিহাস ঐতিহ্যের মাস। সুখের মাস, শোকের মাস। আনন্দ বেদনার মাস। হাসি প্রাপ্তি এবং ব্যর্থতার মাস। স্বপ্ন ও স্বপ্ন ভঙ্গের খেয়া। সুসংবাদ অথবা দুঃসংবাদের সারথি। হক বাতিলের পার্থক্যকারী। মানুষ অমানুষের পরিচয়দানকারী।
এ মাসের বিশেষ দিন আশুরা। আশুরা মহররমের দশ তারিখ। নফল রোযার দিন। আমলের দিবস। সওয়াব হাসিলের শুভক্ষণ। যাপিত এক বছরের গুনাহের কাফফারার সুযোগ। ইতিহাস স্মরণের উপলক্ষ। দ্বিতীয় হিজরীর পূর্ববর্তী সময়ে মানুষ এ দিনে রোজা রাখতেন। রোজা রাখতেন আমাদের মহানবী (সা.) । রোজা ব্রত পালন করতেন মুহাম্মদের ধর্ম পালনকারীরা। সিয়াম পালন করতেন মুসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীরা। উপবাস থাকত জাহেলীযুগের লোকজনও। আশুরার দিন আল্লাহ পাক মুসা (আ.) ও তার কওমকে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করত : ফেরাউন ও তার লোকদেরকে নদীতে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। তার শুকরিয়া পালনার্থে মুসা (আ.) এ দিনে রোজা রাখতেন। এবং আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) মুসার (আ.) আদর্শের অনুগামী হয়ে আশুরার দিন রোযা পালন করতেন। হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, “রাসুল (সা.) মদিনায় হিজরত করে ইহুদীদেরকে আশুরার সিয়াম পালন করতে দেখে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে- ‘এটি একটি মহান দিন। এদিনে আল্লাহ পাক হযরত মুসা (আ.) ও তার সঙ্গীদেরকে নাজাত দিয়েছিলেন। এবং ফেরাউন ও তার লোকদেরকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। তার শুকরিয়া স্বরূপ মুসা (আ.) এ দিনে সিয়াম রাখেন। এতএব আমরা রাখি।’ তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘তোমাদের চেয়ে আমরা মুসা (আ.) এর আদর্শের অধিক হকদার ও দাবিদার। অতপর তিনি সিয়াম রাখেন ও সকলকে রাখতে বলেন’। ( আশুরার রোযা পূর্ব থেকেই রাসুলের রাখার অভ্যাস ছিল)। (বোখারি ১৮৭৮, মুসলিম ১১৩০
রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে ইসলামে আশুরার দিনে রোজা রাখার বিধান ছিল। মুসা (আ.) এবং তার অনুসারীগণ রোজা রাখতেন। জাহেলীযুগে মানুষজন উপবাস থাকত। নবী (সা.) ও তার সহচরগণ এ দিনে সিয়াম সাধনা করতেন। দ্বিতীয় হিজরীতে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজা মানুষের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়। ইচ্ছা হলে সিয়াম সাধনা করবে অন্যথায় পরিত্যাগ করবে। আয়েশা রা. বলেন, “জাহেলী যুগে কুরাইশগণ আশুরার রোজা রাখত। রাসুল (সা.)ও পালন করতেন। মদিনায় হিজরতের পরও পালন করেছেন এবং লোকদের পালন করবার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু যখন রমজান মাসের রোজা ফরজ হল তখন তিনি ইরশাদ করেন, যার মন চায় রোজা রাখ, যার মন চায় পরিত্যাগ কর। (বোখারি ১৮৭৬)।
আগে পরে রোজা পালনের নির্দেশ : ইহুদী ও নাসারারা আশুরার দিনে রোজা রাখে। উপবাসে দিন কাটায়। আশুরার প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করে। এটাকে শুধু নিজেদের ধর্মের স্বতন্ত্র রোজা মনে করে। নিজেদের জীবনে পুণ্য লাভের বড় উপায় বলে ধারণা করে। এ ছাড়া তারা অন্য কোন রোজা রাখে না। রমজানের রোজার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না। রাসুল (সা.) তাদের ইত্যাকার মনোবাঞ্চা সম্পর্কে অবগত হলে তিনি বলেন, তোমরা তাদের খেলাফ কর। এবং তিনি নির্দেশ দেন আশুরার পূর্বে পরে তার সঙ্গে মিলিয়ে যে কোন একদিন সিয়াম পালন করার জন্য। এজন্য মুসলমানদের করণীয় হল, আশুরার রোজার সঙ্গে আগপরের একদিন মিলিয়ে রোজা রাখা। রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখ। এবং ইহুদীদের খেলাফ কর। তোমরা আশুরার সঙ্গে তার পূর্বে একদিন বা পরে একদিন সিয়াম পালন কর। (শরহে ছহীহ ইবনে খুযায়মা ২০৯৫)
আশুরার রোজার ফযিলত : রমজান মাসের রোযা ফরজ। তার সওয়াব অগণিত। রমজানের রোজার প্রতিদান দিবেন আমাদের পালনকারী প্রভু আল্লাহ। রমজানের রোজার পরেই আশুরার রোজার স্থান। তার মর্যাদা ফরজ রোজার পরেই। আশুরার রোজা উত্তম রোজা। সম্মানের সিয়াম। ইতিহাস সম্পর্কিত সিয়াম। তাৎপর্য সম্বিলিত সিয়াম। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, রমজানের পরে সর্বোত্তম সিয়াম হলো মুহাররম মাসের সিয়াম অর্থাৎ আশুরার সিয়াম। এবং ফরজ সালাতের পরে সর্বোত্তম সালাত হলো রাতের নফল সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত। (আবু দাউদ ২৪২১)