কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে কিছু কথা
বাংলাদেশে প্রায় ৬০ হাজারের অধিক কিন্ডারগার্টেন স্কুল আছে। সেই স্কুলগুলোতে ১ কোটিরও অধিক কোমলমতি শিশু লেখাপড়া করছে। ৭ লক্ষাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা, ১ লক্ষ ৫০ হাজার ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারিরা এখানে খুঁেজ পেয়েছেন তাদের কর্মস্থল। এই সকল প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি কোনো অনুদান পায় না। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৬৯১টি, তার মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৭,৬৭২টি। বিদ্যালয় বিহীন এলাকায় নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৩৪টি, নতুন জাতীয় করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৫,২৪০টি। পরীক্ষণ বিদ্যালয় ৫৫টি। মোট ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা ২ কোটি ১৯ লক্ষ ৩২ হাজার ৬৩৮ জন। মোট সরকারী শিক্ষকের সংখ্যা ৩ লক্ষ ২২ হাজার ৭৬৬ জন। প্রতিটি স‹ুলগুলোর পেছনে জমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ, পুন: নির্মাণ, নতুন নতুন ভবন এবং পরিবেশ সর্বোপরি শিক্ষার সার্বিক ব্যয়, মানে শিক্ষকের বেতন ও পরবর্তী কালীন অবসর ভাতা, প্রদানে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়, তারপরও এই প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সবার মধ্যে কম-বেশি প্রশ্ন আছে, বিশেষ করে মফস্বল এলাকায়।
ঠিক সমান না হলেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অর্ধেক শিক্ষার্থী নিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে সরকারের আর্থিক সহযোগিতা ছাড়া, নিজের অর্থে প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ করিয়ে নতুন নতুন কৌশল প্রয়োগ করে সর্বোপরি প্রতিযোগিতায় নিজেকে টিকে থাকার জন্য, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য, প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্ডারগার্টেন স্কুল গুলো। এতে লাভবান হচ্ছে সরকার আর শিক্ষিত বেকারদের কিছু অংশ খুঁেজ পাচ্ছে স্ব-উদ্যোগী কর্মসংস্থান।
এরপরও মাঝে মধ্যেই বিচ্ছিন্ন অপ-প্রচারে ভারসাম্যহীন শর্তটুকু বেড়াজালে কিছু অতি উৎসাহিত কুচক্রি মহলের ইন্ধনে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কাজে ব্যস্ত থাকেন। এমনকি প্রশাসনের উপর মহল পর্যন্ত নেতিবাচক বিষয় উপস্থাপন করে কিন্ডারগার্টেন স্কুল সেবাকে অন্য দিকে প্রবাহিত করছে। বিভাগীয় শহরে কিছু প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন ভালো তা দেখে সমগ্র বাংলাদেশের কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোকে এর আলোকে বিচার করা ঠিক হবে না। আমরা বলতে চাই, আমাদেরকে নিয়ম নীতির ভিতরে নিয়ে আসুন। আর সেজন্য প্রয়োজন সহজ শর্তে নিবন্ধন। ২০১৩ শিক্ষা আইনের ধারা ৮-এর উপধারা ৫, ধারা ১০ এর উপধারা ১, ধারা ২৩ এর উপধারা ৩, এগুলো নিবন্ধনের ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে মনে করা যায়। তাই বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ১৪ দফা দাবী প্রস্তাব করছি। যে গুলোর আলোকে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষাকে নিয়ম-শৃংখলার মধ্যে এনে পরীক্ষামূলক হিসেবে অস্থায়ীভাবে নিবন্ধন দেয়া যেতে পারে। এতে বাংলাদেশ সরকারের এক টাকাও প্রয়োজন হবে না।
১৪ দফা দাবী সমূহ নি¤œরূপ: ১. সহজ শর্তে নিবন্ধনের অনুমতি। ২. বিচ্ছিন্নভাবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া বন্ধ করণ। ৩. শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করণ। ৪. কিন্ডারগার্টেন স্কুল গুলোর জন্য আলাদা শিক্ষা বোর্ড গঠন করা। ৫. কিন্ডারগার্টেন স্কুল সমূহের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বাণিজ্যিক বিল বন্ধ করণ। ৬. কিন্ডারগার্টেন স্কুল সমূহে কম পক্ষে ৬ জন শিক্ষক- শিক্ষিকাদের সরকারি সম্মানি ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করণ। ৭. সরকারি উদ্যোগে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক- শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ। ৮.
কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোকে জেএসসিতে সরাসরি পরীক্ষার অনুমতি প্রদান করা। ৯. থানা শিক্ষা অফিসে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আলাদা ডেস্কের ব্যবস্থা করন। ১০. পিইসি পরীক্ষাকালীন সার্বিক কার্যক্রমে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর শিক্ষক- শিক্ষিকাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ। ১১. পিইসি পরীক্ষায় নিজ কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের পার্শ্ববর্তী কেন্দ্রে স্থানান্তর করা।
১২. বার বার প্রশ্নের ধারা ও মান ববন্টন পরিবর্তন বন্ধ করন এবং ন্যূনতম ৫ বছর মেয়াদী সিলেবাস তৈরি করণ।
১৩. নকল ও প্রশ্নপত্র ফাঁস শত ভাগ বন্ধকরণ এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করণ। ১৪. বহু নির্বাচনী অংশ কমিয়ে লিখিত অংশের প্রতি গুরুত্ব প্রদান ইংরেজি অংশে ঁহংববহ এবং গণিতে সৃজনশীল শীথিল করণ।
লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক সমিতি
সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ