দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালে মাদক ব্যবসায়ীদের বিচার করা উচিত
ব্যারিস্টার এম. সরোয়ার হোসেন
মাদকের যে উপদ্রব, একদিকে তো আমাদের যুব সমাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে, একটা জেনারেশন শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং একটা জাতি শেষ হয়ে যাচ্ছে। মাদকটা একটা ত্রি-চক্রাকারে ঘুরছে এবং আমাদের যুব সমাজকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এই ত্রি-চক্র হল যারা মাদক উৎপাদন করে এবং যারা বাংলাদেশে মার্কেটিং করে এবং এই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত কতিপয় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য। আমার নিজ জেলা পিরোজপুরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু দুষ্ট সদস্য আছেন, যারা ক্ষমতাসীন। পিরোজপুরে মাদকের থাবা কখনও ছিল না। যারা এর মধ্যে ক্ষমতাশীল তারা শুধু নিকৃষ্ট পন্থায় কিছু টাকা-পয়সার জন্য এইভাবে মাদক ব্যবসা করে এসেছে। এই মাদক নিয়ন্ত্রন করার যে দায়িত্ব পুলিশ এবং নাগরিক বিভাগে তারাও এই ত্রি-চক্রের সাথে জড়িত। সামান্য টাকা-পয়সার জন্য যারা মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কথা, রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েও তারা মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিয়ে এই মাদক ব্যবসাকে আরো উৎসাহিত করছে। তারা সমাজ এবং দেশকে ধ্বংসের কিনারায় দাড় করিয়েছে। সৌদি আরবের ইমিগ্রেশনে বড় করে লাল হরফে লেখা থাকে যে, কোন ধরনের মাদক পরিবহনে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে। আমার মতে, এইখানে মাদকের বিরুদ্ধে একটা যুদ্ধ ঘোষণা করা উচিত। যারা মাদক আমদানি করে, যারা মাদক বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে প্রত্যেককে গুরুতর বিচারের সম্মুখিন করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এমন শাস্তি দিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর এই ধরনের মাদক বানিজ্যে নিয়োগ না হতে পারে। তাদেরকে মৃত্যুদন্ড দিতে হবে এবং কঠিন বিচারটা শুরু করতে হবে। কক্সবাজারের এমাদ হোসেন বলেন, এমপি আছেন .. , তাকে দিকে সবার আগে বিচারের সম্মুুখিন করতে হবে। পুরো বাংলাদেশে যারা এই নেটওয়ার্ক এর সাথে জড়িত সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এটা করা কঠিন কাজ নয়। এটার জন্য তেমন একটা সময়েরও দরকার নাই। এটা সবাই জানে, সাংবাদিক ভাই-বোনেরা জানে এবং এলাকায় একটু খোঁজ নিলে জানা যাবে যে, কিভাবে এই মাদক ব্যবসা হয় ? কিভাবে এই মাদক দ্বারা আমাদের যুব সমাজ এবং দেশকে ধ্বংস করেছে। যারা দেশ পরিচালনা করছে তারা জেনে শুনে কোন আইনগত ব্যবস্থা আলোচনায় নিচ্ছে না। দেশের জনগনের ওপর প্রতিহিংসা চলছে । প্রতিহিংসা চলছে যে যুব সমাজ মাদকের মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায়, দুর্নীতির মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায়, অনৈতিকতার মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায়। যুব সমাজ ধ্বংসের যে উপকরণ আছে তার মধ্যে মাদক হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের সদিচ্ছাটাই এখানে সবচেয়ে বড় ব্যাপার। এখানে সরকারী কিছু লোক জড়িত থাকে, তাই এই মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একশন নিচ্ছে না। অথচ তাদের বিরুদ্ধে একশন নেওয়া কোন বড় ব্যাপার নয়। প্রয়োজন বোধে এই মাদক ব্যবসায়ীদের আইন করে কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে বিচার করা যায়।
রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসার সাথে মাদকের কোন সম্পর্ক নাই। রোহিঙ্গা তো আসছে বাংলাদেশে এই এক মাস। তার আগেই আমরা জানি যে, টেকনাফের ওখানে যে বদি আছেন, তার নামে অভিযোগ আছে। তার নেতৃত্বে ওখান থেকে এই মাদক ব্যবসা চলছে। মাদক সম্রাট হিসেবে তার নাম জাহির হয়েছে। তাকে কিছু দিন গ্রেফতার করে রাখা হয়েছিল। সে ইয়াবা সম্রাট হিসেবেও পরিচিত। সে আবার জামিন নিয়ে বিরাট গাড়ি নিয়ে নির্বিঘœ দেখিয়ে চলে যায়। আবার পুরাদমে সে এবং তার সিন্ডিকেট মাদক ব্যবসা শুরু করছে। রোহিঙ্গা সমস্যা একটা রাজনৈতিক সমস্যা, মিয়ানমারের সমস্যা এবং তারা তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশে আসছে। তারা যেহেতু অতি দরিদ্র, হয়ত কেউ কেউ করতে পারে। যে এই ধরনের সমস্যায় জড়াবে তাকে সেইভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে। এক্ষেত্রে সাধারণ মন্তব্য করা যাবে না যে, যারা রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে তাদের কারণে মাদক ব্যবসা বেড়ে গেছে।
পরিচিতি: সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
মতামত গ্রহণ: মাকসুদা যূথি
সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ