প্রথম থেকেই মিয়ানমার বাংলাদেশকে ধুঁকা দিয়ে আসছে
রোহিঙ্গা ইস্যুতে কূটনৈতিকভাবে একট চাপ লাগবে। প্রথম দিকে বাংলাদেশ একটু পিছিয়ে পড়েছিল। এখন মিয়ানমারও আমাদের সাথে বসতে চাচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে হয়েছে। অথচ মিয়ানমার যেটা বলছে এর সবটাই ফাঁকা। এই সমস্যাটা যখন থেকে শুরু হয়েছে প্রথম থেকেই মিয়ানমার বাংলাদেশকে ধোকা দিয়ে আসছে। প্রথম দফা যখন রোহিঙ্গাদের পুশ করলো বাংলাদেশের দিকে তখন সবাইকে ফেরত নেওয়ার কথা ছিল, নেয়নি। এটা ’৭৮ এর কথা। আবার ’৯১ সালে যখন আলোচনা হল তখনো নেয় নি। এবারো তারা একটা লোক দেখানো পথ নিয়েছে যে, আমরা আলোচনায় বসতে চাচ্ছি। প্রশ্ন হল, তাহলে তোমরা তাড়িয়ে দিয়েছো কেন? এখন বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনাটা কি ? বাংলাদেশের সঙ্গে তো আলোচনা নাই। আলোচনাটা হল যারা আসছে তারা চলে যাবে। এটাই হতে পারে আলোচনার বিষয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক যেটা হল সেটাতে তো কোন দেশের কোনো কৃতিত্ব নাই। এটাও পৃথিবীর ধনী দেশ গুলো তাদের নিজেদের উদ্যোগে নিজেদের সম্মান রক্ষার উদ্দেশ্যে করেছে। এত বড় ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা পৃথিবীতে সাম্প্রতিককালে আর ঘটে নাই। এটাকে একটা ইস্যু করলো না জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। এটা শুধু শো করার জন্য। জাতিসংঘের মহাসচিবকে চীন বলে রেখেছে পরিস্থিতি যাই হোক, আমরা মিয়ানমারের পক্ষে থাকবো। এখানে অবরোধের যে আহ্বান জানাচ্ছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, সেই অবরোধ কিছুতেই মিয়ানমারের ওপরে আরোপ করতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ পারবে না। সেক্ষেত্রে আমার ধারণা যে, রাষ্ট্রীয় এখতিয়ার চীন এবং রাশিয়া একযোগ। ভেটো তো শুধু চীন দিলেই যথেষ্ট। এই পরিস্থিতিকে কোনো কূটনৈতিক সাফল্য বলে বিবেচনা করা যায় না। আমি আরেকটি বিষয় মনে করি যে, আমাদের এক ধরনের গোয়েন্দা নজর দারির দরকার আছে। কেন আমাদের গোয়েন্দারা এটা জানতে পারেন নি? আন্ডার কাভার গোয়েন্দা থাকে প্রত্যেক ক্যাম্পে, না থাকলে থাকা উচিত। মিয়ানমার, চায়না, ইন্ডিয়া, রাশিয়া, আমেরিকা এদের সবার পর্যাপ্ত গোয়েন্দা রয়েছে। তাহলে তারা কি এটা দেখলো না ২১ তারিখ থেকে অকারণে ব্যাপকভাবে মিয়ানমার রাখাইনে সৈন্য সমাবেশ করেছে কেন? তারা মুসলিম এলাকায় কাউকে তখনো নির্যাতন করা শুরু করে নি। কিন্তু একটা আতংক তৈরি করার জন্য সে এলাকায় টহল দিচ্ছিল। মিলিটারীর গাড়ি অস্ত্র নিয়ে কেন টহল দিচ্ছে, সাধারন মানুষ যদি বুঝতে পারতো হাউকাউ করে সাড়া দুনিয়াকে জানিয়ে দিতে পারতো। তাহলে কিন্তু ২৫ তারিখে বাংলাদেশে যারা আসতে পারে নাই তারা মারা পড়তো না। আমরা বলতে পারতাম, একটা গণহত্যার প্রস্তুতি চলছে। এই কথা যদি আমরা সারা বিশ্বকে জানাতে পারতাম তাহলে কিন্তু এতটা গণহত্যা হতো না। এবং বাংলাদেশকে এত বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হতো না। ধরেন ফিরিয়ে নেওয়ার একটা চুক্তি হল। কিন্তু দেখা গেল পাঁচ হাজার লোক ফেরত নিয়ে আর নিলো না। ’৯১ সালে যেটা হয়েছিল যে, আমরা তিন কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলাম। আমাদের মিলিটারী মিয়ানমারকে জানিয়ে দিয়েছিল যে, এ ধরনের কাজ করলে আমরা আরো ভেতরে ঢুকবো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে শুনলাম, তারা যে আমাদের আকাশ সীমা লংঘন করছে, এটা তেমন বিপদজনক কিছু না। এতে আতংকিত হওয়ার মতো কোনো কিছু নেই। তাহলে আকাশ সীমা রক্ষার জন্য আপনি বিমান বাহিনী কেন রেখেছেন? যে কেউ আপনার আকাশ সীমা লংঘন করবে আর আপনি বলে দিলেন যে এর ফলে বিপদের কিছু নাই। মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশ যে বারগেইনিং করবে, এমন কোনো কিছু বাংলাদেশের হাতে নেই। ইভেন বাংলাদেশ যে ভারতের সাথে বারগেইনিং করবে এমন কোনো ঘুটি বাংলাদেশের হাতে নেই। কিছু একটা তো থাকতে হয় । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার সাথে যখন চুক্তি হল, চার্চিল যখন বুঝলেন যে, পুরো জার্মানী দখল করে নিতে চায় আমেরিকা, তখনই তার সেনাবাহিনীকে বললো বার্লিন দখল করো। এখন বাংলাদেশের কি এমন কিছু আছে? আমাদের যে কাচা কলা পররাষ্ট্রনীতি তাতে ভারতের সাথে বারগেইনিং করার কিছু নাই। হিমালয় সমান এত বড় বন্ধু আমাদের, তাহলে আপনার হাতে কি আছে? সরকার বলছে, যতগুলো লোক এসেছে আগে কিংবা পরে তাদের সাথে আমরা ভাগ করে খাবো। তাহলে তো এদের জন্য ক্যাম্প করার কোনো দরকার পড়ে না। তাদের খাওয়ানোর কোনো দরকার নাই। তারা কাজ করুক। আপনি যদি এটাই ঠিক করে থাকেন যে, তাদের সাথে ভাগ করে খাবেন, তাহলে তো তারা আমাদের লোক হয়ে গিয়েছে। আমাদের লোকই যদি হয়ে গিয়ে থাকে তো বসে খাবে কেন? আমরা কাজ করে খাবো, ওরাও কাজ করে খাক। ওদেরকে কাজ দিন। আর মনে রাখতে হবে যে, প্রথম থেকেই মিয়ানমার আমাদেরকে ধোকা দিয়ে আসছে।
পরিচিতি: সম্পাদক, দৈনিক দিনকাল
মতামত গ্রহণ: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান