সরস্বতী
বাক্যের সঙ্গে জ্ঞান সংশ্লিষ্ট। অতএব সরস্বতী কেবল শব্দের অধিষ্ঠাত্রী দেবতাই নন, জ্ঞানাধিষ্ঠাত্রী দেবতাও বটে। বেদ ছাড়া অন্যান্য বিদ্যা ও বাক্যের অধিপতিÑ এই অর্থে ঈশ্বরের নাম সরস্বতী। বেদের অধিপতি অর্থে তার নাম সাবিত্রী (এই সাবিত্রী-সত্যবান কাহিনির পৌরাণিক চরিত্র নন)। সরস্বতীকে শ্বেতপদ্মে অধিষ্ঠিতা, শ্বেতবস্ত্র পরিহিতা, শ্বেতবর্ণা ও শ্বেতবীণাধরা বলার তাৎপর্য এই যেÑ বিদ্যা দিয়ে মনের অজ্ঞান-অন্ধকার দূর হয়, সুতরাং অজ্ঞান অন্ধকার-স্বরূপ, বিদ্যা আলোক স্বরূপ। এবং আলোক স্বরূপ প্রকাশে শ্বেতবর্ণের আবশ্যক। সরস্বতীর হাতে বই; কারণ বইই জ্ঞানের ভা-ারস্বরূপ। অতএব দেখা যাচ্ছে যে নিরাকারা সরস্বতীর রূপ কল্পনা করতে হলে তাকে শ্বেতবর্ণ বিশিষ্ট বলে কল্পনা করলেই প্রশংসনীয় রূপক হয়। ধর্মতত্ত্ব-এর কোনো লেখক যথার্থই বলেছেন যে, মাঘমাসে সরস্বতী পূজা বিহিত হওয়ার কারণ এই যে, এই সময়ে বসন্তের ছায়া পড়ে এবং বসন্তকালই সঙ্গীতবিলাসের সর্বোৎকৃষ্ট সময়। বাস্তবিক সঙ্গীতেশ্বরীর আরাধনা বসন্তের প্রারম্ভেই হওয়া উচিত। সরস্বতী যে শাস্ত্রকারগণের মতে ঈশ্বরের নামান্তর মাত্র; তা ‘বিশ্বরূপা বিশালাক্ষী’ ইত্যাদি বাক্য আলোচনা করলেই বোঝা যাবে।কার্তিক
কেবল সংগ্রামের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা, এই অর্থে ঈশ্বরের নাম কার্তিক। যুদ্ধদেবের মতি তেজোময় হওয়া উচিত, সুতরাং কার্তিকেয়কে অগ্নির পুত্রও বলা হয়েছে। কৃত্তিকা নামক আগুনরঙা ছয়টি তারা, ঐ অগ্নির পুত্র বা মহাদেবের পুত্রকে পালন করেছিলেন, এই জন্য তার নাম কার্তিকেয় বা ষড়ানন হয়েছে। অগ্নির মত তেজবিশিষ্ট দেবতার অগ্নিবর্ণা পালয়িত্রী কল্পনা করাই যুক্তিসঙ্গত। যোদ্ধা ও সুন্দরবর্ণ ময়ূরই কার্তিকের উপযুক্ত বাহন। যোদ্ধারা ভালভাবে রণসজ্জা করে ভাল একটা বাহনে চেপেই যুদ্ধক্ষেত্রে যান; সুতরাং যুদ্ধের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা অর্থে ঈশ্বরের রূপ ও বাহনাদি কল্পনা করতে হলে, তাকে অতি সুন্দর পুরুষ ও সুন্দর বাহনে আরূঢ় বলেই বর্ণনা করতে হয়।