পর্বতারোহী হওয়ার পেছনে একটা বড় গল্প আছে!
এম এ মুহিত
কখনো স্বপ্ন দেখিনি কিংবা ভাবিনী আমি একজন পর্বতারোহী হবো। তবে পর্বতারোহীর হওয়ার পেছনে একটা গল্প আছে। শৈশব বা কৌশরে অনেকেরই কোনো না কোনো বিশেষ দিকের প্রতি ঝোঁক থাকে। আমারও একটা বিশেষ দিকে ঝোঁক বা আগ্রহ ছিল। আমি যখন স্কুলে পড়ি বা ছেলেবেলায়, প্রকৃতির প্রতি আমার ভীষণ ঝোঁক ছিল। আমি প্রকৃতি খুব উপভোগ করতাম। যদিও পুরান ঢাকায় বড় হয়েছি, কিন্তু স্কুল ফাইনাল পরীক্ষার পরে আমরা পুরো পরিবার গ্রামের বাড়ি চলে যেতাম। ক্ষেত, সবুজ ঘাস, ফসলের মাঠ দেখতাম। স্কুল ফাইনাল পরীক্ষার পরে, হেমন্ত, নবান্নো এবং শীতের সময়, ফসলের মাঠের আইলে বসে পাকা ধানের ঘ্রাণ শুকতাম। আমি সেই ছোটবেলায় নদীর পাড়ে গিয়ে বসে থাকতাম। নদীতে যখন নৌকা চলত তখন তা বসে বসে দেখতাম, এগুলো আমাকে খুব টানত। গাছপালা, নদী, পাল তোলা নৌকা ভাল লাগত। আমার জন্মস্থান ভোলায়। ওখানে গেলে ডাব গাছে উঠে যেতাম। ডাব আমার প্রিয় পানীয়। দুরন্তপনায় দিন কেটেছে। গাছ থেকে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়া। গ্রামের ছেলেদের সাথে নিয়ে এ সব করতাম। একা একা নদীর পাড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতাম। ছোটবেলা থেকেই আমি পাখি খুব পছন্দ করতাম। পাখির রঙ, রূপ আর সুরে মুগ্ধ হতাম। ১৯৯৭ সালে আমার পরিচয় হয় ড. ইনাম আল হকের সাথে। এর্ন্টাকটিকা, উত্তর মেরুতে একমাত্র বাংলাদেশি যিনি পাখি নিয়ে কাজ করেন। পাখি বিশেষজ্ঞ। ইনাম ভাইয়ের সাথে পাখি দেখতে প্রথমে সিলেটে যাই। তারপর রাঙামাটি, বান্দরবানের পাহাড়গুলোতে যাই। ওখানে পাহাড় গুলো উঁচু উঁচু। অনেক উঁচুতে ওঠি পাখি দেখার জন্য। আমাদের পাহাড়ে কিছু বিশেষ পাখি থাকে যা সমতলে থাকে না। পাখি দেখা আমার একধরনের শখ। ইনাম ভাইয়ের সাথে পাখি দেখতে উঁচু উঁচু পাহাড়ে বেয়ে ওঠা থেকে পর্বতারোহী হওয়া। আমি এই পর্যন্ত বিশটা অভিযান করেছি।
আগামী ৩ অক্টোবর আমরা ছয়জন যাচ্ছি হিমালয়ের ২০ হাজার ৫০০ ফুট উচু ‘লারকে’ পর্বতশিখরে, যা হবে বাংলাদেশের প্রথম অভিযান।
অভিযানটিতে আমি টিম লিডার। আমি সব সময় নতুনদের নিয়ে যাই আমার সাথে। আমি একা যাই না। গত বছর গিয়েছি ৪ জনকে নিয়ে। এর আগের বছর নিয়ে গিয়েছি ৭ জনকে । এবারের অভিযানে যে ৬ জন যাচ্ছে তাদের মধ্যে দুজন আছে যারা অলরেডি ৬ হাজার মিটার বা ২০ হাজার ফুটের ৫টা পর্বত জয় করেছে। তারা হলেন, নুর মোহাম্মদ আর কাজী বাহালুল মজনু। শায়লা পারভীন আর একরামুল হাসান শাকিল ১টা করে ৬ হাজার মিটারের পর্বত জয় করেছে। লিয়াকত তানভী চূড়ার ১৭ হাজার ফুট পর্যন্ত যাবে।
পরিচিতি: এভারেস্ট বিজয়ী
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান