দ্রুত এগুচ্ছে পদ্মা সেতুর কাজ, বসলো প্রথম স্প্যান
মোহাম্মদ মোক্তার হোসেন, মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি : অবশেষে পদ্মা সেতুর পিলারের উপর বসলো প্রথম সুপারস্ট্রাকচার। শনিবার সকাল প্রায় সাড়ে ১০টার দিকে সেতুর প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে অনেকটা এগিয়ে গেছে স্বপ্নের এ সেতুর সুদৃঢ় বাস্তবতা।যেন বাস্তব রুপ নিতে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো স্বপ্নের এ সেতুটি।মূল সেতুর ৩৭ ও ৩৮ নং পিলারের মাঝে ১৫০ ফুট দৈর্ঘের ৭বি স্প্যানটি স্থাপন করা হয়।অস্থায়ীভাবে অস্থায়ী বেয়ারিংয়ের ওপর এই স্প্যান বসানো হলো।তবে সম্পূর্ণরুপে স্প্যানটি বসাতে আরো সময় লাগবে বলে জানা যায়।আগামী মাসেই আরও ৩-৪টি স্প্যান বসানো হবে ।আর সেতুর ৪২টি পিলারের ওপর ১৫০ মিটার দীর্ঘ এই সুপারস্ট্রাকচারগুলো সম্পূর্ণরুপে স্থাপন হলেই সেতুর পূর্ণ চেহারা প্রকাশ পাবে।তখনই সেতুর ওপর দিয়ে চলতে শুরু করবে যানবাহন।৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুর ৪২টি পিলারে মোট ৪১টি স্প্যান থাকবে। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০মিটার এবং আনুমানিক ওজন ২ হাজার ৯০০ টন।
এদিকে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাজিরা নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত থেকে স্প্যান বসানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
তিনি শনিবার সকালে প্রথম স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) খুঁটির (পিয়ার) ওপর স্থাপনের পর পরিদর্শণ শেষে জাজিরা জেটিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। এই মহেন্দ্রক্ষটিতে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, সেতু সচিব আনোয়ারুল ইসলাম, সেতুটির প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম,পদ্মা সেতুর সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী, সেনা বাহিনীর জেনারেল আবু সাইদ, ঠিকাদরী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রীজের কোম্পানীর প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। ১৫০ মিটার দীর্ঘ এই স্প্যানটি স্থাপনের মধ্য দিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর অগ্রগতির আরেক ধাপ এগিয়ে গেল।
সকাল ৮টা নাগাদ স্প্যান ওপরে তোলা হয়।এর আগে পিয়ার দুটির উপরে ‘বিয়ারিং’ লাগানো হয়েছে।এই বিয়ারিংয়ের উপর গেঁথে থাকবে স্প্যান।ইতোমধ্যে ক্রেনে করে মাওয়া থেকে স্প্যানটি আনা হয়।আর স্প্যান যে দুটি পিয়ারে বসানো হবে তার আশপাশ ড্রেজিং করে স্প্যান বহনের প্রক্রিয়াও ছিল গত দ’ুদিন।প্রথম দিকে স্প্যানের রং সোনালি হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা ধূসর করা হয়েছে। ফলে পদ্মা সেতুটি দেখতে সোনালি রঙের না হয়ে ধূসর রঙের হবে।অন্যদিকে ইংরেজি অক্ষরের অনেকটা ‘ওয়াই’ আকৃতির আদলে নির্মাণ করা হচ্ছে পদ্মা সেতুর পিলার।
এদিকে নদীর বুকে প্রথম জেগে ওঠা মূল সেতুর ৩৭ ও ৩৮ নং পিয়ারে প্রথম স্প্যানটি বসানোর পরপরই আনন্দে উদ্বেলিত ছিল পদ্মাপারের সকল শ্রেণীপেশার মানুষ।স্থানীয় রাজনীতিবিদ ,নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষও ছিল সেতুর বাস্তবতা নিয়ে আলাপচারিতায় মুখরিত।তবে প্রকল্প এলাকার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন,পর্যায়ক্রমে মূল পিলারের ওপর ছয়টি স্প্যান বসিয়ে দেশবাসীর আশার আলো এ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান করা হবে।ছয়টি স্প্যান বসানো হলে সেতুর ৯০০ মিটার দৃশ্যমান হবে।সবমিলিয়ে গতকাল শনিবার পর্যন্ত পদ্মাসেতু প্রকল্পের সার্বিক বাস্তবায়ন কাজ শেষ হয়েছে ৪৭.৫ শতাংশ।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে চায়না মেজর ব্রীজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। চার লেনবিশিষ্ট এই সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২২ মিটার চওড়া।অন্যদিকে এটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আগে থেকেই জানানো হয়েছে।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে খুব শিঘ্রই এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। সেতুর কাজ যাতে এক মুহুর্তের জন্য বন্ধ না থাকে সেই জন্য তাঁর নির্দেশে অনানুষ্ঠানিকভাবে সেতুর স্প্যান উঠানো হয়েছে।
সেতু সচিব বলেন, অনেক ক্ষেত্রে পিয়ারের গভীরতা বৃদ্ধি বা প্রয়োজন অনুযায়ী তা পরিবর্তন করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। তার মানে সেতুর ডিজাইনের পরিবর্তন নয়।