ঢাকা কাস্টমস হাউজে পাসওয়ার্ড জালিয়াতি করে ভ্যাট ফাঁকি
সরকার হারাচ্ছে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব
এইচএম দেলোয়ার : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন ঢাকা কাস্টমস হাউজে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ও তাদের মনোনীত ক্লিয়ারিং ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্টের পাসওয়ার্ড জালিয়াতি করে সরকারের হাজার কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে সরকার প্রতিদিন কয়েকশ কোটি টাকার রাজস্বসহ মাসে কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত একটি সংঘবব্ধ পাচারকারী চক্র। ভুয়া ডকুমেন্টে, অনেক সময় নামকাওয়াস্তে শুল্ক পরিশোধকৃত পেপারস, এক পেপারস ডকুমেন্ট পাস করে তা দেখিয়ে একাধিক পণ্যের চালান পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা কাস্টমস হাউজের এয়ারফ্রেইট আমদানি শাখার ৪টি গেট দিয়ে পণ্য পাচারের মহোৎসবে পরিণত হয়েছে। ঢাকা কাস্টমস হাউজ কর্তৃপক্ষ ও একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতিপূর্বে পণ্য চালান খালাস দেওয়ার সময় ব্যবসায়ীদের গোপন পাসওয়ার্ড কাস্টমস হাউজ কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ করতো। ঢাকা কাস্টমস হাউজের ইটিপি ম্যানেজার পাসওয়ার্ড নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করতেন। টোটাল সার্ভারের দায়িত্ব ছিল ইটিপি ম্যানেজারের। কিন্তু নতুন অর্থবছরের পাসওয়ার্ড ব্যবসায়ীদের নিজস্ব জিম্মায় ছেড়ে দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা তা নিয়ন্ত্রণ করছেন। ফলে একটি সংঘবদ্ধ ব্যবসায়ী গ্রুপ যারা বাণিজ্যিক বা কমার্শিয়াল পণ্য আমদানি ও খালাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তারা পাসওয়ার্ড জালিয়াতি করে ভ্যাট ও টোটাল শুল্ক ফাঁকি দিয়ে যথাযথ শুল্ক পরিশোধ না করে বা একটি পেপার পাস করিয়ে তা দেখিয়ে একাধিক পণ্যের চালান বা ভুয়া ডকুমেন্টে বা ডকুমেন্ট ছাড়াই গেট কন্টাক্ট-এ ১০ হাজার টন ওজনের পণ্য বা এরও বেশি ওজনের পণ্যের চালান পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা আরো জানান, পাসওয়ার্ড ব্যবসায়ীদের জিম্মায় দেওয়ার পর ব্যবসায়ীরা তা জালিয়াতি করে ১০০ ডলারের পেপারস দেখাচ্ছে ১০ ডলার। ছোট ছোট পণ্য বড় বড় পণ্যের চালানের বস্তায় ভরে পাচার করছে। এক কোম্পানির পাস বই না থাকলেও অন্য কোম্পানির পাস বইয়ের পাতা তার পাস বইয়ে লাগিয়ে পণ্য পাচার করছে। ভ্যাট ছাড়াই পেপারস পাস করছে। অথচ ভ্যাট ছাড়া কোনো পেপারই এন্ট্রি করার কথা নয়। কিন্তু পাসওয়ার্ড দিয়ে ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়া বিভিন্ন ভুয়াা প্রতিষ্ঠানের নামে এন্ট্রি করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে সাধারণ সিঅ্যান্ডএফকে এক রকম রেট দেয়। শর্ট ডেলিভারিতে সর্বনিম্ন রেট ৪ ডলার, এলসির বিপরীতে ফাইন শতকরা ৩৩ থেকে ৫৩ ভাগ। আর কন্ট্রাক্টে রেট দেয় মাত্র ৩ ডলার আর ফাইন করে মাত্র শতকরা ১৩ ভাগ। এতে কন্ট্রাক্ট ছাড়া সাধারণ সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
ব্যবসায়ীরা আরো জানান, আইটি বিশেষজ্ঞ ছাড়া পাসওয়ার্ড কেউ ধরতে পারবে না। পাসওয়ার্ড জালিয়াতি করে কাস্টমস-এর সঙ্গে গেট কন্ট্রাক্ট, প্রিভেনটিভ কন্ট্রাক্ট, কাস্টমস গোয়েন্দা কন্ট্রাক্টে প্রতিদিন এয়ারফ্রেইট আমদানি শাখার ৪টি গেট দিয়ে প্রায় ১শ কোটি টাকার পণ্য পাচার হয়ে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, কুরিয়ার গেট দিয়ে ইতিপূর্বে ৬ কাস্টমস কর্মকর্তাকে মারধর করে ৩০ কোটি টাকার পাচারের ঘটনায় মামলা হলেও এ ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। এখন আর মারধরের ঘটনা ঘটছে না। কাস্টমস ম্যানেজে এ গেট দিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী গ্রুপ বন্ধের দিন যেমন: শুক্র-শনিবার এবং অফিস খোলার দিন সন্ধার পর একটানে পণ্য পার করে নিয়ে যাচ্ছে। এই কুরিয়ার গেটে প্রতিদিন ১ থেকে ২ কোটি টাকার রাজ্স্ব আদায় সম্ভব হতো। কিন্তু বর্তমানে এর চার ভাগের এক ভাগও রাজস্ব আদায় হয় না।