শিক্ষকদের বিদ্যাচুরি : অবাক হওয়ার কী আছে?
মাসুদ রানা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্লেইজারিজম বা বিদ্যাচুরির অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। শিক্ষক হয়ে তাদের এই প্লেইজারিজমের ঘটনাটি যদি সত্য হয়ে থাকে খুবই লজ্জা ও দুঃখের বিষয়।
আসলে এটি একটি সাংস্কৃতিক সঙ্কট। বাঙালি জাতির মধ্যে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় কিংবা উচিত-অনুচিতের পার্থক্য বলতে তেমন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। অবশ্য, সাংস্কৃতিক এই ধ্বস বা পঁচনটা শুরু হয়েছে শীর্ষদেশ বা মাথা থেকে। যে দেশে ভোট চুরি করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হওয়া যায়, সে দেশে লেখা চুরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া কি খুব বড় একটা অন্যায় হিসেবে প্রত্যক্ষিত হবে? যে দেশের রাষ্ট্র ও সরকার এমনকি শিক্ষক ও মা-বাবাও শিশুদেরকে নকল করে পরীক্ষা দিতে উৎসাহিত করে, সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অন্যের লেখা চুরি করে নিজের বলে চালাবেন, তাতে অবাক হওয়ার আসলেই কি কিছু আছে?
দুঃখজনক হলেও সত্য, বাঙালি জাতির মধ্যে এই প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান দুটো থেকে নৈতিকতার শিক্ষা বহুলাংশে নির্বাসিত। একসময় বিকল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমাজ-পরিবর্তন প্রয়াসী ছাত্র ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো ক্রিয়াশীল ছিল বলে, বাঙালি জাতির মধ্যে উচ্চ-নৈতিকতা সম্পন্ন তারুণ্যের উপস্থিতি ও তৎপরতা ছিল। পরিতাপের বিষয়, সে সবও আজ অতীতের ঘটনা মাত্র! আমি জানি, আমার কথা জনপ্রিয় পণ্যের মতো বাজারে বিকোয় না; কিন্তু তবুও বলছি এ-সবের মূলে আছে জাতিগত আত্মপরিচয়ের সঙ্কট। একটি জাতি যখন আত্মপরিচয়-সচেতন হয়, তখন তার মধ্যে আমি কে, আমার বৈশিষ্ট্য কী ইত্যাদি মনোবোধিক প্রশ্ন ও উত্তর তার নৈতিকতার অবয়ব দেয়। আর, আত্মপরিচয় সঙ্কটগ্রস্ত হলে জাতির ‘ডিফাইনিং ক্যারেক্টার অস্পষ্ট হয়ে যায় বলে, এর নৈতিকতা ভেঙ্গে পড়ে। দুর্ভাগ্যবশত বাঙালি জাতির নৈতিকতা ভেঙ্গে পড়েছে আত্মপরিচয়ের দুঃসহ সঙ্কটের কারণে।
পৃথিবীর ইতিহাস বলে, নৈতিকভাবে অধঃপতিত জাতি প্রথমে আত্মকলহে জর্জরিত হয় এবং পরবর্তীতে উন্নততর নৈতিক শক্তিসম্পন্ন জাতির কাছে পদানত হয়; যদিও পদানত হওয়ার বিষয়টি ঠিক পদানত হিসেবে প্রত্যক্ষিত হয় না, বরং উদ্ধার হিসেবে বিবেচিত হয়। – লন্ডন, ইংল্যান্ড