সাক্ষাৎকারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হাসিনা যেভাবে চাচ্ছেন সেভাবে হবে না
রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, মিয়ানমারের পাশে প্রভাবশালী তিন রাষ্ট্র ভারত, চীন এবং রাশিয়া, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বিশ^ নেতাদের নীরবতা, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের নেতাদের ঝিমিয়ে পড়া, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবাদী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্প্রতি তার নিজ বাসায় সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন প্রতিবেদক মাঈন উদ্দিন আরিফ। রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে পাঠানো বাংলাদেশের জন্য কতটুকু চ্যালেঞ্জ এই প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। মিয়ানমারের পাশে এখন ভারত, চীন এবং রাশিয়া দাঁড়িয়েছে। ফলে তাদের শক্তি এখন অনেক বেশি হয়ে গেছে। তাই এটা হাসিনা বিবি যেভাবে চাচ্ছেন সেভাবে কিন্তু সমাধান করা যাবে না।
এই ইস্যুতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে এ অভিযোগের বিষয়ে মহাসচিব বলেন, আমরা রোহিঙ্গা ইস্যুটা অনেক বিশাল মনে করছি, এটা জাতীয় ইস্যু। বর্তমানে আমাদের দেশের যে অবস্থা সেখানে ১০, ১৫, ২০ লক্ষ লোককে আশ্রয় দেয়ার অবস্থান আমাদের নেই। এই গণহত্যা বন্ধ করতে আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করতে হবে এবং এই বিষয়ে তাদেরকে বাধ্য করতে হবে।
জাতীয় ঐক্যের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, বিদেশের আগ্রাসনের কারণে যদি কোনো সমস্যা তৈরি হয়, আমি এটাকে আগ্রাসন বলে মনে করি। আমি মনে করি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য এটা একটা আঘাত। সেখানে জাতীয় ঐক্য যদি সৃষ্টি না হয়, সমস্ত দেশের মানুষ এক সঙ্গে যদি কথা না বলে তাহলে কিন্তু সে শক্তিটা রাষ্ট্র পায় না। ওনাদের (সরকার) তো কোনো কাজ করতে হতো না। এটা তারা সমস্ত রাজনৈতিক দল ও সিটিজেনদের ডেকে একটা মিটিং করে বলতেন যে, আমরা এই করতে যাচ্ছি, আমরা এই করতে চাই। এটাতো হচ্ছে নৈতিক সমর্থন। মোরাল সাপোর্ট। প্রধানমন্ত্রী ইজ এ আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী নন। প্রধানমন্ত্রী হচ্ছে এখন সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের প্রধানমন্ত্রী।
চেয়ারপারসন লন্ডনে থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কথা বলতে পারেন, তিনি কি কথা বলেছেন কিনা জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, উনি গেছেন চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। এন্ড সি ইজ আন্ডার ট্রিটমেন্ট। তার অসুখটা এতোই বড় ছিল যে পায়ের সমস্যার কারণে তিনি হাঁটতেও পারতেন না। সেখানে এখন ওনার চিকিৎসা চলছে তার পক্ষে এখন ওখানে গিয়ে বাহিরে মুভমেন্ট করা সম্ভব না। ওখান থেকে তিনি যে নির্দেশ দিচ্ছেন, সেই হিসেবে আমরা কাজ করছি।
চেয়ারপারসন দেশের বাহিরে একারণে দলীয় কর্মকা-ে স্থবিরতার বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির রাজনীতি ঠা-া হয়ে গেছে এটা একেবারেই ভুল কথা। মূলত রাজনীতির কর্মকা- করার পরিবেশিই বাংলাদেশে নেই। রোহিঙ্গাদের মাঝে আমাদের ত্রাণ বিতরণ এটাও তো একটা রাজনৈতিক দলের কর্মকা-। আমরা সব জায়গায় দৃশ্যমান। আমাদের মেডিকেল ক্যাম্পে হাজার হাজার রোহিঙ্গা চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। একইভাবে আমাদের লোকেরা সারা দেশে সদস্য সংগ্রহ করছে। আমাদের সাংগঠনিক কর্মকা- হিসেবে এটাকে নেওয়া হয়েছে।
ভারত, চীন ও রাশিয়া এই হত্যা বন্ধ করতে বলছে না আবার ত্রাণ ও পাঠাচ্ছেন এটাকে কিভাবে দেখছেন জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা হচ্ছে জুতা মেরে গরু দান। এগুলো হচ্ছে ভন্ডামি, হিপোক্রেসি। সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের এই মুহূর্তে করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে এবং বিশ্বের জনমত গঠনের জন্য টিম পাঠাতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নিজে মুভ করতে হবে। বাংলাদেশে যখন সমস্য হয়েছিল আমরা যখন ভারতে গিয়েছিলাম তখন ইন্দিরা গান্ধি তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সব দেশে পাঠিয়েছেন। টিম পাঠিয়েছেন। তার পর তিনি নিজেই গিয়ে প্রত্যেকটা দেশ সফর করেছেন এবং বাধ্য করেছেন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু